চাকরির পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় বিক্ষোভ। মঙ্গলবার, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
আবেদনপত্র হাতে নিয়ে সকাল সকাল হাসপাতাল চত্বরে হাজির হয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তাঁরা দেখলেন, অনিবার্য কারণবশত ওই ‘ওয়াক-ইন-ইন্টারভিউ’ স্থগিত করার নোটিস ঝুলিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর তা দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন প্রার্থীরা। মঙ্গলবার সকালে কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, অ্যানাটমি বিভাগের ল্যাবরেটরি অ্যাটেন্ড্যান্ট (ডোম) পদে নিয়োগের জন্য গত ২৫ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। দু’টি শূন্য পদের জন্য ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ এবং ১৮-৪০ বছর বয়সিদের ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছিল। পাশাপাশি এ-ও বলা হয়েছিল যে, প্রার্থী ডোম সম্প্রদায়ের হলে ভাল এবং সংশ্লিষ্ট কাজে তাঁর দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে আগে থেকে কোনও আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কথা বলা হয়নি। বরং ইন্টারভিউয়ের দিন আবেদনপত্র-সহ সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ আবেদনকারীদের হাসপাতালে আসতে বলা হয়।
সেই মতো এ দিন অসংখ্য চাকরিপ্রার্থী ওই হাসপাতালে আসেন এবং তখনই পরীক্ষা বাতিলের নোটিস দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। কেন আগাম না জানিয়ে আচমকা ইন্টারভিউ বাতিল করা হল, সেই প্রশ্ন তোলেন।
সূত্রের খবর, ল্যাবরেটরি অ্যাটেন্ড্যান্ট (ডোম) পদের জন্য এ দিন যে সমস্ত আবেদনকারী এসেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই ডোম সম্প্রদায়ের নন। এমনকি ওই কাজে তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই। বেশ কয়েক জন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল স্নাতক স্তরের। অনেকেই চতুর্থ শ্রেণির পদের চাকরি ভেবেই এই পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন বলেও জানান। ক্রমশ বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় সাগর দত্ত হাসপাতালের আধিকারিকেরা এসে প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে পরিস্থিতি সামলাতে আসে পুলিশ।
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’-র সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, ‘‘এই ঘটনাই প্রমাণ করছে এখনও কতটা বেকারত্ব রয়েছে। ল্যাবরেটরি অ্যাটেন্ড্যান্ট (ডোম) পদের জন্য ইন্টারভিউ দিতে আসা প্রার্থীদের মধ্যে একটা বড় অংশই উচ্চশিক্ষিত। বিজ্ঞপ্তিতে পদ সম্পর্কে আরও নির্দিষ্ট করে বলে দিলে হয়তো ভাল হত।’’
সূত্রের খবর, প্রার্থীদের মধ্যে অনেকের সেই কাজে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা এবং তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেকটাই বেশি হওয়ার কারণেই এই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। যদিও কামারহাটির ওই হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শেষ মুহূর্তে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পরে। তার পরেই পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। না হলে পরীক্ষা চলার মাঝেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হত যে তার থেকে ফিরে আসা যেত না।’’ তিনি জানান, কোভিডের চিকিৎসা, প্রতিষেধক প্রদান, পড়ুয়াদের ক্লাস ও পরীক্ষা— সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যাতে ওই পদের জন্য ওয়াক-ইন-ইন্টারভিউ করার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে ইন্টারভিউ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অরুণবাবু আরও বলেন, ‘‘পরীক্ষা দিতে এসে ফিরে যাওয়ার জন্য আমরা প্রার্থীদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছি। তবে পরীক্ষা যে স্থগিত করা হচ্ছে, তা হাসপাতালের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছিল। ফের বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’