উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলাকা সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলতেই এই উদ্যোগ। ফাইল চিত্র।
আমপানের দু’বছর পরে অবশেষে টনক নড়ল পুলিশের। ভয়াবহ সেই ঘূর্ণিঝড়ে বিকল হয়ে গিয়েছিল ভিআইপি রোডের অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা। যার জেরে দীর্ঘ দিন ধরেই অসুবিধা হচ্ছে বিভিন্ন ঘটনা ও দুর্ঘটনার তদন্তের কাজে। এত দিনে সেই সব সিসি ক্যামেরা মেরামতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। যেগুলি সারানো যাবে না, সেগুলির পরিবর্তে নতুন সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। পুলিশকর্তাদের দাবি, উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলাকা সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলতেই এই উদ্যোগ।
বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মা জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরা বসানোর বড়সড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। ওয়েবেল-সহ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে ইতিমধ্যে এ নিয়ে চুক্তিও হয়ে গিয়েছে। তবে, নতুন করে কোথায় কোথায় ক্যামেরা বসবে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি নগরপাল।
গত ১ জানুয়ারি নিউ টাউনের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় সেখানকারই হস্টেলের বাসিন্দা এক ছাত্রের। কিন্তু, ওই এলাকার সিসি ক্যামেরা বিকল হয়ে থাকায় গাড়ির ফুটেজ জোগাড় করতে নাজেহাল হয় পুলিশ। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতেই অনেকটা সময় লেগে যায়। পুলিশ সেই সময়ে স্বীকারও করে নেয় যে, ওই এলাকার ৮০টি সিসি ক্যামেরা বিকল হয়ে থাকায় তাদের পক্ষে অভিযুক্তের নাগাল পেতে সময় লেগেছে। কমিশনারেট সূত্রের খবর, তার পরেই সর্বত্র সিসি ক্যামেরা সচল রাখতে তৎপর হয় পুলিশ।
ভিআইপি রোড এমনই একটি রাস্তা, যেখান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষের যাতায়াত লেগেই থাকে। তাই ওই রাস্তাটি সিসি ক্যামেরার নজরদারির বাইরে এ ভাবে ফেলে রাখতে চাইছে না বিধাননগর কমিশনারেট। কিন্তু, সেখানকার ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের একাংশ মনে করছেন, নতুন ক্যামেরা বসালে বা পুরনো ক্যামেরা সারিয়ে ফেললেই সমস্যার সমাধান হবে না। সারা বছর সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও কমিশনারেটকে নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সব প্রয়াসই নির্ধারিত সময়ের পরে নিষ্ফল হয়ে যাবে।
এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বর্তমানে শহরের বহু রাস্তাতেই ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। কিন্তু সেগুলির কোনও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় প্রচুর ক্যামেরা খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। সিসি ক্যামেরা সরবরাহকারী সংস্থাগুলি বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আর ক্যামেরার রক্ষণাবেক্ষণ করে না। ফলে বহু ক্যামেরাই বিকল হয়ে যায়।’’
পুলিশের ওই মহলেরই দাবি, ক্যামেরার রক্ষণাবেক্ষণের প্রচুর খরচ। নিউ টাউনে এনকেডিএ সেই ব্যয় বহন করতে পারে বলে তাদের এলাকায় সিসি ক্যামেরা মোটামুটি সচল থাকে। কিন্তু, ভিআইপি রোডে তা হয় না। ফলে আমপানের পরে দু’বছর পেরিয়ে গেলেও ভিআইপি রোডে এখনও বহু ক্যামেরা বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। পুলিশকে নির্ভর করতে হচ্ছে রাস্তার ধারের দোকান ও আবাসনের ক্যামেরার উপরে। তবে, সেগুলির ফুটেজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশি তদন্তে বিশেষ কাজে আসে না বলে দাবি পুলিশকর্মীদের একাংশের।
তাই এত দিন পরে যখন ভিআইপি রোডকে ফের সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে আনার বিষয়ে পুলিশ সচেষ্ট হয়েছে, তখন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যাতে আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে দিকেও দফতরকে খেয়াল রাখতে হবে।