গার্ডেনরিচের এক ঝাঁক বাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত কলকাতা পুরসভার। ছবি পিটিআই।
গার্ডেনরিচ এলাকায় নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় মুখ পুড়েছে কলকাতা পুরসভার। এই ঘটনা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা এক ঝাঁক বাড়ির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। কলকাতা পুরসভার সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্যপরীক্ষার কাজ শুরু করতে মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়েছেন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়াররা। রবিবার গভীর রাতে নির্মীয়মাণ বাড়িটি ভেঙে পড়ার পর ওই এলাকার একাধিক নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভেঙে পড়া বাড়িতে তো বটেই, এই এলাকার বেশিরভাগ আবাসনের কোনওটি আংশিক বেআইনি, কোনওটি আবার পুরোপুরি বেআইনি ভাবে তৈরি করেছেন প্রোমোটারেরা। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়াররা ওই এলাকার একাধিক বাড়ির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে কলকাতা পুরসভা একটি রিপোর্ট দেবেন বলে জানা গিয়েছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ছ’টি বাড়ি আপাতত চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই বাড়িগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিয়ে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করেছে পুরসভা। সোমবার রাতেই ওই ছ’টি বাড়িকে কলকাতা পুরসভার তরফে নোটিস দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, ভেঙে পড়া বাড়িটির লাগোয়া আরও একটি পাঁচ তলার বাড়ি নজরে এসেছে পুর আধিকারিকদের। সেই বাড়িটি আবার এক দিকে হেলে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা। তাতেই প্রাথমিক ভাবে খোঁজখবর নিয়ে জানা গিয়েছে, ওই বাড়িটি যাতে ভেঙে পড়ে আবার নতুন করে কোনও বিপর্যয় না ঘটে, সেই বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছে পুরসভা। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর শুনানির বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। আগামী ২১ মার্চ কলকাতা পুরসভায় ওই সব নির্মীয়মাণ বিপজ্জনক বাড়িগুলি নিয়ে শুনানি হবে। সেই শুনানির পর যাবতীয় পদক্ষেপ করবে কলকাতা পুরসভা। কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘স্ট্রাকচারাল ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়ার যাবতীয় শর্ত পূরণ না করতে পারলে বাড়িগুলিকে কি আইনত বৈধতা দেওয়া সম্ভব? এমন প্রশ্ন পুর কর্তৃপক্ষের মনে দানা বেঁধেছে। কারণ, যে বাড়িগুলি নিয়ে মূলত প্রশ্ন উঠছে, সেখানে এখন বহু মানুষ বাস করেন। তবে যে সব বাড়ির স্বাস্থ্য একেবারেই ভাল নয়, সেগুলিকে ভেঙে ফেলা হতে পারে। তবে সব কিছু ঠিক হবে শুনানি পর্বের পর।’’
এরই মধ্যে গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে পড়ার ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করল কলকাতা পুরসভা। ১৫ নম্বর বরো এবং ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ় করেছে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের উত্তর দিতে বলা হয়েছে। রবিবার রাতের এই ঘটনায় সোমবার পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ডিজির সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তার পরেই একে একে গার্ডেনরিচ এলাকায় থাকা একাধিক বেআইনি নির্মাণ নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। যে হেতু মেয়রের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দর এলাকাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে, তাই এই বিষয়ে যাবতীয় পদক্ষেপ দ্রুততার সঙ্গে করতে চায় কলকাতা পুরসভা।