কৃতী: ধর্মতলার বাড়িতে অভয়কুমার গুপ্ত। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
দু’বছর আগে রেডিয়োয় তার নাম করে প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, “কলকাতার অভয়কুমার গুপ্ত দেখিয়ে দিয়েছে রাস্তার আলোয় পড়েও সফল হওয়া যায়। আইসিএসই-র দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। দেখিয়ে দিয়েছে অর্থনৈতিক অবস্থা আসলে কোনও বাধাই নয়।”
২০১৮ সালের সেই ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের পরে দু’বছর কেটে গিয়েছে। করোনা অতিমারির এই সময়ে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের সামনে অভয় ও তার পরিবার। অনটনের কারণে এখন লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াই দায় হয়ে পড়েছে অভয়ের। টানা লকডাউনে বন্ধ তার বাবা রামবাবু গুপ্তের ফুটপাতের ম্যাগাজ়িনের স্টল। অভয়ের প্রশংসা করার সময়ে প্রধানমন্ত্রী ওই ফুটপাতের স্টলে বসে রাস্তার আলোয় অভয়ের লেখাপড়া করার কথা দেশের মানুষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে দিন যান্ত্রিক গোলমালে প্রধানমন্ত্রীকে ১৬ বছরের অভয় জানাতে পারেনি বাবা কত কষ্ট করে তাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন।
কষ্ট এখন বেড়ে গিয়েছে আরও কয়েক গুণ। বাবার ম্যাগাজ়িনের স্টল বন্ধ। কখনও আধপেটা খেয়ে, কখনও রেশন কার্ড তৈরির জন্য বাবার সঙ্গে হন্যে হয়ে ঘুরে সময় কাটছে অভয়ের। লেখাপড়া কার্যত শিকেয় উঠেছে আঠারো ছুঁইছুঁই অভয়ের। তার কথায়, “আমাদের ঘর ছোট। দিনরাত আলো-পাখা চালু রাখাও সমস্যা। বাবার সাহায্য হবে ভেবে স্টলে গিয়ে পড়তাম। কেউ ইংরেজি বই চাইলে নাম জেনে নিয়ে বাবার হাতে তুলে দিতাম। স্টল তুলে দিতে হয়েছে। এখন কী করে বাবাকে সাহায্য করব ভেবে পাচ্ছি না।”
আরও পড়ুন: গঙ্গায় ডুবে মৃত্যু ছাত্রের
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট সংলগ্ন মার্কেট স্ট্রিটে এক কামরার ঘরে বাবা-মা আর ভাই অক্ষয়ের সঙ্গে থাকে অভয়। প্রতি মাসে ঘরের ভাড়া সাড়ে ছ’শো টাকা। সংসারের খরচ জুগিয়ে রামবাবুর একার পক্ষে সম্ভব ছিল না অভয়ের লেখাপড়া চালানো। পার্ক স্ট্রিটের স্কুল থেকে দশম শ্রেণিতে ভাল ফলের পরে এ জে সি বসু রোডের একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়তে চায় অভয়। কিন্তু সেখানে এক বছরের পড়ার খরচ এক লক্ষ টাকা একসঙ্গে দিতে বলা হয়েছিল। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অভয়ের একাদশ শ্রেণির পড়ার খরচ দিয়ে দেয়। ওই বছরই জুলাইয়ে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের পরে সংবাদপত্রের খবর দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভয়ের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার খরচও মকুব করে দেন। গত ২০ মার্চ লকডাউন শুরুর আগে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শেষ হয় বিজ্ঞানের ছাত্র অভয়ের।
রামবাবু জানান, সেই সময়ে সাহায্য পেলেও এখন চরম আর্থিক সঙ্কটে তাঁরা। ছোট ছেলে অক্ষয়ের স্কুলের ফি বাকি। তিনি বলেন, “২০১৭ সালে রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। এখনও আসেনি। চাল-গম তুলে যে খাব সেই উপায়ও নেই। স্থানীয় পুর অফিস থেকে বলে দেওয়া হয়েছে ওই আবেদন বাতিল হয়ে গিয়েছে। লকডাউন না উঠলে হবে না।”
গত এক মাসে চার কিলোগ্রাম চাল আর পাঁচশো ডাল পাঠিয়েছেন ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর সন্দীপন সাহা। আগামী ১৮ জুলাই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকার পরীক্ষা অভয়ের। মেধাবী ছাত্রটি বলছে, “পড়তে বসছি। কিন্তু পড়া হচ্ছে কই! মন কি বাতের পরে আর আমাদের কথা মনে নেই মোদীজির। যদি একটু মনে রাখতেন ভাল হত।”
অবশ্য রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘এ রাজ্যের কাউকে আমরা অভুক্ত থাকতে দেব না। ওই ছাত্রের পরিবারের কাছে আমরা সব ধরনের সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’’
আরও পড়ুন: দেহ নিয়ে যাওয়ায় ‘হেনস্থা’ চালককে
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)