যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
সুরের আগুন জ্বলেছিল আচমকা। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তা ছড়িয়ে পড়ল বুকে বুকে। গত সেপ্টেম্বরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ‘হেনস্থা’ ও বিজেপি সমর্থকদের তাণ্ডবের পরে প্রতিবাদ মিছিলের ঘটনা। তার পর থেকে যে কোনও প্রতিবাদের ডাকেই থাকে সেই সুরের ছোঁয়া।
দেড় শতক আগে উত্তর ইটালির ধানখেতে মেয়েদের বিষাদগাথা লোকগানের সুর এ ভাবেই আছড়ে পড়েছে একুশ শতকের প্রতিবাদী কলকাতায়। ‘বেলা চাও’-এর প্রতিবাদী সুর এখন মুখে মুখে ফিরছে অন্য গান হয়ে— ‘অমিত শাহ, মোদী যাও, ফ্যাসিবাদ ভয় পাবে, বাংলা থেকে বিজেপি তাড়াও’। নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী মিছিলের পরে এই গানের জন্মের কথা বলছিলেন তুলনামূলক সাহিত্যের এম ফিল পড়ুয়া তিতির। সে দিন ওই গানে গলা মিলিয়েছিলেন ফার্মাসিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পড়ুয়া অনিরুদ্ধ, হিরণ্ময় বা কিছু দিনের জন্য তুলনামূলক সাহিত্যের ক্লাস করা সুরজিৎ। তিতিরের কথায়, ‘‘বেলা চাও-এ সুর সকলের প্রিয়। কী ভাবে যেন স্লোগানের ফাঁকে সেই সুরের তালে তালেই অন্য গান জেগে উঠল।’’
মার্চে দিল্লিতে শ্রম অধিকার মঞ্চের কর্মসূচির আগে ওই সুরে অন্য গান বেঁধে ইউটিউবে দিয়েছিলেন তিতিরেরা— ‘ওই শোন কারা ডাকে, লড়ে যাই লড়ে যাই যাই’! এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল-পর্বের পরে মিছিলের গান। তিতিরের কথায়, ‘‘প্রথমবার গানটা ভেবেচিন্তেই তৈরি হয়। কিন্তু মিছিলে অত ভাববার সুযোগ কোথায়! ভিতর থেকে গানটা যেন ঠেলে বেরোল।’’ এখন নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী মিছিলগুলিতেও প্রতিবাদীদের কানে লড়াইয়ের মন্ত্রণা দিচ্ছে ‘বেলা চাও’।
‘বেলা চাও’ বা ‘বিদায় সুন্দরী’র সুরে লোকগান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইটালিতে প্রতিবাদের সুর হয়ে উঠেছিল। জনপ্রিয় সেই সুর পরে প্রতিবাদের আঙ্গিকে ব্যবহার করেন পিট সিগার থেকে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মতো শিল্পীরা। কখনও ব্রাজ়িল সমর্থকেরা বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে চাঙ্গায়নী-সুধার মতো এমন গান গেয়েছে।
যাদবপুরের এই গানের ভিডিয়ো এখন শেয়ার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘বেলা চাও’ এ বার মোদী জমানার বিরুদ্ধে প্রতিবাদেও একাকার।