এট্টুলা বাবু জগজীবন। —ফাইল চিত্র।
পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ১৪ মাস থাকতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এক দিনের জন্যও মনোরোগের ওষুধ খেতে হয়নি। ডাক্তারেরা তাঁর মধ্যে মানসিক সমস্যার ছিটেফোঁটা উপসর্গও খুঁজে পাননি। তবু, স্রেফ ভাষা-সমস্যার জন্য এতগুলি মাস পরিবার-পরিজন তথা সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয়েছিল বিশাখাপত্তনম জেলার বাসিন্দা এট্টুলা বাবু জগজীবনকে। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে তাঁর ঘরবাড়ির সূত্র খুঁজে পাওয়ার পরে সম্প্রতি শালিমার স্টেশন থেকে ট্রেনে বিশাখাপত্তনমে রওনা হন তেলুগুভাষী যুবক।
নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী, পাভলভ হাসপাতালে বছরের পর বছর অকারণে আটক আবাসিকদের ঘরে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেই কোনও রোগের উপসর্গ ছাড়া স্রেফ ভাষা-সমস্যায় আটক অনেকের হদিস মিলেছে। কন্নড়ভাষী এক মহিলা নাগমণি যেমন বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং পাভলভ মিলিয়ে ১৬ বছর এ রাজ্যের হাসপাতালে পড়ে ছিলেন। জগজীবনের ক্ষেত্রে তাঁকে বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় পুলিশ খুঁজে পায়। খানিক ঘুরপাক খেয়ে কোর্টের মাধ্যমে তাঁর ঠাঁই হয় পাভলভে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভাষা বোঝা যায়নি বলে কাউকে মনোরোগী ভেবে কোর্টের মাধ্যমে হাসপাতালে পাঠানোর ঘটনা কম ঘটেনি। মানসিক স্বাস্থ্য আইনে এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন।’’
জগজীবনের সহায় হন এক বছর আগে পাভলভ থেকে বাড়ি ফেরা অন্ধ্রপ্রদেশের এক রোগিণীর আত্মীয়া শ্বেতা রেড্ডি। জগজীবনের ভাষা কিছুতেই বোঝা যাচ্ছিল না। পাভলভে সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা তাঁকে শ্বেতার সঙ্গে কথা বলান। বোঝা যায়, সম্পূর্ণ সুস্থ ওই যুবক সাফাইকর্মীর কাজে এ রাজ্যে এসেছিলেন। বিশাখাপত্তনমে গ্রামের বাড়ি ফিরতে তিনি আত্মবিশ্বাসী। জগজীবনের স্ত্রী রয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
পাভলভের এক কর্তা বলেন, ‘‘জগজীবনকে টিকিট কেটে ট্রেনে তুলে দিই। তাঁর সঙ্গে কিছু হাতখরচ দেওয়া হয়। ওঁর মানসিক স্থিতির উপরে আমাদের আস্থা রয়েছে।’’