Crime

কোভিডে আরও কঠিন অ্যাসিড-দহনের লড়াই

অ্যাসিড আক্রান্তদের লড়াই আরও অনেক বেশি কঠিন করে দিয়েছে কোভিড-১৯, মনে করছেন বর্তমানে দমদমের বাসিন্দা সঞ্চয়িতা যাদব।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২০ ০২:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভলিবল খেলার স্বপ্ন দেখা বছর সতেরোর ঋতু সাইনির জীবন বদলে গিয়েছিল এক লহমায়, যখন মুখে এসে পড়েছিল অ্যাসিড। তবে ২০১২ সালের সেই ঘটনার পরে হাল ছেড়ে দেননি তিনি। বরং নিজের পায়ে দাঁড়াতে কাজ শুরু করেছিলেন অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে তৈরি ‘শিরোজ হ্যাংআউট’ কাফেতে। চেয়েছিলেন, তাঁর মতো আক্রান্তদের সাহায্য করতে। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি অবশ্য ফের বদলে দিয়েছে ঋতুর মতো মেয়েদের জীবন। লকডাউনের কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ আগরা, লখনউয়ের ওই কাফে। ফলে আপাতত কর্মহীন ঋতুর মতো প্রায় ৩০ জন অ্যাসিড আক্রান্ত। শুধু তা-ই নয়, কোভিড আবহে থমকে গিয়েছে তাঁদের চিকিৎসা এবং মামলার কাজও।

Advertisement

লকডাউনের আগে পরিস্থিতি আঁচ করে হরিয়ানার রোহতকে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন ঋতু। তখনই জানতে পারেন, মায়ের ক্যানসার। কোভিড আবহে এখন সেই লড়াইটাও লড়ছেন বছর ছাব্বিশের ওই তরুণী। বলছেন, ‘‘কাফের মাধ্যমেই আমাদের অনেকের রোজগার হত। হঠাৎ করেই সব বন্ধ। এখন কেউ বাইরের খাবার খাচ্ছেন না, তাই লখনউয়ের কাফে খুলেও লাভ হচ্ছে না। অনেকে বাড়ি চলে গিয়েছেন।’’

অ্যাসিড আক্রান্তদের লড়াই আরও অনেক বেশি কঠিন করে দিয়েছে কোভিড-১৯, মনে করছেন বর্তমানে দমদমের বাসিন্দা সঞ্চয়িতা যাদব। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৪ সালে আমার উপরে হামলার ঘটনার সাড়ে তিন বছর পরে অভিযুক্ত ধরা পড়ে। কিন্তু কোভিডের কারণে এখন সেই মামলা ঝুলে আছে। অন্য মেয়েদের অবস্থা আরও খারাপ। লোকের বাড়িতে কাজ করতেন যে আক্রান্তেরা, কোভিডে তাঁদের অনেকে কাজ হারিয়েছেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের অনেকেরও কাজ নেই। যাঁদের দু’চোখের দৃষ্টি কেড়েছে অ্যাসিড, তাঁদের অবস্থা রীতিমতো শোচনীয়।’’ অ্যাসিড-হামলার শিকার মনীষা পৈলান আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে আদালতে মামলা আটকে থাকায় অভিযুক্তদের সাজাও হচ্ছে না। উল্টে অনেক অ্যাসিড আক্রান্ত ফিরে গিয়েছেন তাঁদের পুরনো পাড়ায়। ফলে তাঁদের উপরে ফের হামলার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতেও অবশ্য বন্ধ হয়নি অ্যাসিড-হামলা। তবে কোভিড নিয়ে ব্যস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থায় অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া মেয়েদের চিকিৎসা চলে গিয়েছে খানিক পিছনের সারিতে। কারও দৃষ্টিশক্তি ফেরানোর চিকিৎসা থমকে রয়েছে, কোনও আক্রান্তের আবার জরুরি অস্ত্রোপচারের পরের চিকিৎসা কোভিডের কারণে বন্ধ। ঋতু বলছেন, ‘‘বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অরুণাচল প্রদেশে সম্প্রতি অ্যাসিড-হামলা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু তাঁদের চিকিৎসাই ঠিক মতো করানো যাচ্ছে না। অ্যাসিড-যুদ্ধে আমাদেরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। তাই ওঁদের পাশে গিয়ে আগের মতো দাঁড়াতেও কিছুটা ভয় লাগছে।’’

এই অবস্থায় শিরোজ কাফের কর্মচারীরা তো বটেই, সেই সঙ্গে অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া অন্য মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে জনতার থেকে অনুদার সংগ্রহের আয়োজন করেছে দিল্লির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই সঙ্গে তাঁদের নিয়েই অনলাইনে তারা শুরু করছে নতুন উদ্যোগ— ‘আ গিফ্ট স্টোরি’। অ্যাসিড আক্রান্তদের তৈরি বিশেষ উপহার সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা থাকছে সেখানে। সংস্থার তরফে অলোক দীক্ষিত বলছেন, ‘‘অর্থনৈতিক সঙ্কট আর চিকিৎসা থমকে যাওয়াই এই মুহূর্তে অ্যাসিড আক্রান্তদের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাই শিরোজ কাফের ২২ জন অ্যাসিড আক্রান্ত কর্মীকে নিয়ে শুরু হচ্ছে এই অনলাইন উদ্যোগ। ভবিষ্যতে দেশের অন্য জায়গার মেয়েদেরও এর সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। কাফে আপাতত বন্ধ থাকলেও অ্যাসিড আক্রান্তদের সামনে রোজগারের নতুন পথ খুলে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement