শহরে ‘জয়রাইড’-এর ধাক্কায় ফের বাড়বে না তো দুর্ঘটনার সংখ্যা? প্রতীকী ছবি।
শহরে ‘জয়রাইড’-এর ধাক্কায় ফের বাড়বে না তো দুর্ঘটনার সংখ্যা? দু’বছরের বেশি সময় পরে রাতের শহরে পথের বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় আপাতত এই প্রশ্ন ঘুরছে ট্র্যাফিক পুলিশকর্তাদের মধ্যে। নৈশ-বিধি উঠে যাওয়ার পরে সম্প্রতি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে হইহুল্লোড় করার পুরনো ‘অভ্যাস’ ফেরার আভাস মিলতেই আরও জোরালো হয়েছে এই প্রশ্ন।
গত বৃহস্পতিবার নবান্নের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছিল, শুক্রবার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ। ভিড় জায়গায় মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি মেনে চলার নিয়ম চালু থাকলেও সে দিন থেকে শিথিল হয়েছে বাকি বিধি। করোনার জেরে রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নৈশ কার্ফুর বিধিও তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে শুক্রবার থেকেই শহরের রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। বহু রাস্তায় রাতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে হইহুল্লোড় করতে দেখা গিয়েছে কমবয়সিদের। বাইপাস, পার্ক স্ট্রিট এলাকায় এই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মধ্যরাতে সিগন্যাল ভেঙে গাড়ি ছোটানোর পুরনো ‘রোগও’ চোখে পড়েছে। বাইপাস, এ জে সি বসু রোড-সহ একাধিক রাস্তায় এই প্রবণতা ছিল কার্যত লাগামছাড়া। এর পরেই ট্র্যাফিক পুলিশের একাংশের মধ্যে আশঙ্কা বাড়ছে, রাতের শহরে ফের দুর্ঘটনা বাড়বে না তো? বাইপাসে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘কার্ফু উঠতেই যে ভাবে অনেকে গাড়ি, মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন, তাতে হিতে বিপরীত না হয়! আগে রাতে কিছুটা শান্তি ছিল, এ বার কী হবে ভাবছি! এই হুল্লোড়ে না ফের দুর্ঘটনা বাড়ে।’’
যদিও কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এই বছর শহরের রাস্তায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে কিছুটা। সংখ্যার নিরিখে কমেছে মৃত্যুও। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত শহরে ৫২টি পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৫৬ জনের। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শহরে ৪৪টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় দুর্ঘটনার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে। স্বস্তি দিচ্ছে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে শুধু মার্চের দুর্ঘটনার হিসেবও। গত বছর মার্চে ২৪টি দুর্ঘটনায় শহরে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল, এই বছর ১৪টি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ১৪ জন। কিন্তু রাতের বিধি উঠে যাওয়ায় এই সংখ্যা ফের বাড়বে কি না, সেই আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশের অন্দরেই।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, রাতে বরাবরই পথ-আইন ভাঙার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়। তার জেরে নানা সময়ে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এত দিন নৈশ-বিধি থাকায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনোর প্রবণতা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন নৈশ-বিধি উঠে যাওয়ায় রাতের পথে গাড়ির সংখ্যার পাশাপাশি বেপরোয়া গাড়িচালকদের দৌরাত্ম্যও বাড়ার আশঙ্কা থাকছে। আর এই আশঙ্কা থেকেই রাতের শহরে নাকা তল্লাশিতে আরও জোর দেওয়ার কথা ভাবছেন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা। পথ-আইন ভাঙা আটকাতে দিনের পাশাপাশি রাতেও কড়া নজরদারি চলবে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নৈশ বিধিনিষেধ না থাকলেও নাকা তল্লাশি চলবে। থাকবে মত্ত গাড়ি চালকদের ধরতে নজরদারি। এমনকি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালালেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’