বিশ্বজিৎ মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
দু’দিন নিখোঁজ থাকার পরে উদ্ধার হল এক তরুণের দেহ। শুক্রবার প্রগতি ময়দান থানা এলাকার খানাবেড়িয়া খাল থেকে দেহটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বিশ্বজিৎ মণ্ডল (১৯) নামে ওই তরুণের। দেহের ভিতরে ও বাইরে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি বলেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। ভিসেরা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে প্রগতি ময়দান থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান পরিজন এবং প্রতিবেশীরা। এই ঘটনায় ওই তরুণকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে বলে পরিবার সূত্রের খবর।
পুলিশ জানায়, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র বিশ্বজিৎ মুকুন্দপুরের বুধেরহাটের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি একটি কেটারিং সংস্থায় পরিবেশনের কাজও করতেন। পরিবারের সদস্যেরা জানান, গত ৯ তারিখ কয়েক জন বন্ধুকে নিয়ে বিশ্বজিৎ খানাবেড়িয়ায় পিসির বাড়িতে যান। রাতে খাওয়াদাওয়া করে স্থানীয় ক্লাবের কাছে চলা একটি মেলায় যান তাঁরা। বিশ্বজিতের এক কাকা জানান, তাঁরা শুনেছেন, মেলায় হাঁটার সময়ে ওই দলের কারও সঙ্গে স্থানীয় কারও ধাক্কা লাগায় শুরু হয় ঝামেলা। তার মধ্যেই এক মহিলা বিশ্বজিৎকে চড় মারেন। বিশ্বজিতের সঙ্গে থাকা এক বন্ধু জানান, ঝামেলা মেটাতে তাঁরা স্থানীয় মহিলাদের বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু তার মধ্যেই আচমকা বিশ্বজিৎকে আর দেখা যায়নি। বন্ধুদের দাবি, ঘটনাস্থলে থাকা লোকজনের কেউ কেউ জানান, বিশ্বজিৎকে ওই ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্লাব-সহ আশপাশে রাতভর খোঁজ করেও না মেলায় পরিবারকে খবর দেন বন্ধুরা।
ওই তরুণের আত্মীয়দের একাংশের অভিযোগ, বুধবার সকালে ওই ক্লাবের কাছে গেলে কেউ সহযোগিতা করেননি। উল্টে তাঁদের উপরে চড়াও হয়ে মারধর করা হয়। ওই দিনই প্রগতি ময়দান থানার নিখোঁজ ডায়েরি হয়। এ দিকে, শুক্রবার সকালে দেহ উদ্ধারের পরে পোশাক দেখে বিশ্বজিৎকে শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যেরা। ওই ক্লাবের কাছেই খাল থেকে দেহটি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের।
বুধেরহাট এলাকার বাসিন্দা তাপস মণ্ডল এবং ছবি মণ্ডলের ছোট ছেলে বিশ্বজিৎ। স্থানীয়দেরও অভিযোগ, পিটিয়ে মারা হয়েছে বিশ্বজিৎকে। এই ঘটনায় খানাবেড়িয়ার কিছু বাসিন্দা জড়িত। সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত বলেও তাঁদের দাবি। তা না হলে বিশ্বজিতের খোঁজ নিতে গিয়ে তাঁর পরিচিতদের কেন আক্রান্ত হতে হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন বিশ্বজিতের আত্মীয় থেকে প্রতিবেশীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সময়ে বিশ্বজিতের সঙ্গে যে বন্ধুরা ছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এমনকি, নিখোঁজ ডায়েরি হওয়ার পরে বুধবার ওই বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে খানাবেড়িয়া এলাকায় তল্লাশিও চালিয়েছিল পুলিশ। তবে ওই খালে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি কেন করেনি পুলিশ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতের আত্মীয়েরা।