হোয়াটসঅ্যাপে এক যুবতীর ছবি দিয়ে, গলা নকল করে ওই যুবকের সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে ‘প্রেম’ করছিল অভিযুক্ত রনি দাস। প্রতীকী ছবি।
পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন দেওয়ার একটি অ্যাপ মারফত পরিচয় হওয়ার পরে এক যুবকের কাছ থেকে নানা অছিলায় আড়াই লক্ষেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক ‘তরুণী’। এমনই অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেছিল নাগেরবাজার থানা। কিন্তু পুলিশ পরে দেখে, অভিযুক্ত আসলে বছর পঁচিশের এক যুবক! হোয়াটসঅ্যাপে নিজের পরিবর্তে এক যুবতীর ছবি দিয়ে, গলা নকল করে ওই যুবকের সঙ্গে প্রায় এক বছর ধরে ‘প্রেম’ করছিল সে। অভিযুক্ত রনি দাসকে বুধবার তার ঠাকুরপুকুরের খান মহম্মদ রোডের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে নাগেরবাজার থানার পুলিশ। সে দিনই ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতকে দু’দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, প্রতারিত যুবকের বাড়ি দমদমের পূর্ব সিঁথি রোডে। গত ১০ জানুয়ারি তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ২০২১ সালের অক্টোবরে পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনের একটি অ্যাপে রনিতা রায়চৌধুরী নামে এক ‘তরুণী’র সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর মক্কেলের। রনিতা নিজেকে একটি বিউটি পার্লারের মালকিন বলে দাবি করে। তার পরে বিয়ের কথাবার্তা চলে। দু’জনের কখনও মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়নি। এমনকি, ভিডিয়ো কলেও দেখা হয়নি। শুধু ফোন আর হোয়াটসঅ্যাপে কথা ও মেসেজ আদান-প্রদান হয়েছিল।
প্রতারিত যুবকের অভিযোগ, আলাপের দু’দিন পরেই রনিতা তার মায়ের চিকিৎসার নাম করে ৮৫ হাজার টাকা চায় তাঁর কাছে। সেই টাকা তিনি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা করেন। কিছু দিন পরে ‘মায়ের মৃত্যু হয়েছে’ বলে দাবি করে দেহ সৎকার এবং শ্রাদ্ধের নাম করে আরও ৯৭ হাজার টাকা চাওয়া হয়। ইউপিআই-এর মাধ্যমে সেই টাকা পাঠান যুবক। পরে রনিতা নিজের চিকিৎসার নাম করে আরও ৭১ হাজার টাকা চাইলে সেই টাকাও দেন তিনি।
কিন্তু এর পরে সন্দেহ হওয়ায় তিনি টাকা ফেরত চান। রনিতা তাঁকে জানায়, এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত দেবে। টাকা নিতে তাঁকে এক জায়গায় আসতেও বলে সে। সেখানে মাকে নিয়ে গিয়েছিলেন অভিযোগকারী। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে ফিরে আসতে হয় তাঁদের। পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনের সেই অ্যাপে দেওয়া রনিতার ঠিকানা দেখে যুবক বুঝতে পারেন, অ্যাকাউন্টটি ভুয়ো। পুলিশে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে, অভিযুক্তকে খুঁজে পেতে বিশেষ ঘাম ঝরাতে হয়নি পুলিশকে। মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই অ্যাপে রনিতা নামের ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছিল রনি। হোয়াটসঅ্যাপে এক সুন্দরী তরুণীর ছবি লাগিয়েছিল। গলা নকল করে ওই যুবকের সঙ্গে প্রেম করত সে। রনির বাবার আনাজের ব্যবসা আছে।’’
বিভাসের পরামর্শ, ‘‘পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন অ্যাপ ও সাইটে প্রতারণার ফাঁদ পাতা রয়েছে। যাচাই না করলে সমস্যায় পড়তে হবে।’’