Sexual Harassment

ফের যৌন হেনস্থার অভিযোগ, ‘বেআইনি’ গেস্ট হাউস তবু চলছেই

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার ইকো পার্ক এলাকার ওই হোটেলে ঘর বুক করেন এক যুগল। তার পরেই রাতে ওই তরুণী অভিযোগ করেন, সঙ্গী যুবক তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২২ ১০:২০
Share:

কেন ওই যুগল হোটেলে ঘর বুক করেছিলেন, তা স্পষ্ট করে জানাতে চায়নি পুলিশ। প্রতীকী ছবি।

সপ্তাহখানেক আগেই রাজারহাটের একটি বিলাসবহুল রিসর্টে ভাড়া নেওয়া ভিলায় গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। এ বার নিউ টাউনের ইকো পার্ক এলাকার একটি হোটেলে এক তরুণীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠল তাঁরই সঙ্গী যুবকের বিরুদ্ধে। রাজারহাটের নারায়ণপুরের বাসিন্দা সলমন গায়েন নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার হোটেল ও অতিথিশালাগুলিতে একের পর এক এমন ধরনের ঘটনা কেন ঠেকানো যাচ্ছে না, এই ঘটনার পরে সেই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার ইকো পার্ক এলাকার ওই হোটেলে ঘর বুক করেন এক যুগল। তার পরেই রাতে ওই তরুণী অভিযোগ করেন, সঙ্গী যুবক তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছেন। কেন ওই যুগল হোটেলে ঘর বুক করেছিলেন, তা স্পষ্ট করে জানাতে চায়নি পুলিশ।

এই নিয়ে গত এক মাসে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় এমন তিনটি ঘটনা ঘটল। উল্লেখ্য, বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সল্টলেকে আবাসিক বাড়িতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে অতিথিশালা। সেখানে কোথাও দেহ ব্যবসার অভিযোগ উঠছে, কোথাও ধর্ষণের। আরও অভিযোগ, এই ধরনের অতিথিশালা বা হোটেলের সঙ্গে স্থানীয় থানার পুলিশের একাংশের যোগাযোগ রয়েছে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, তা না হলে কী ভাবে সেই সব অতিথিশালা রমরমিয়ে চলতে পারে?

Advertisement

প্রসঙ্গ, চলতি মাসে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানা এলাকার একটি অতিথিশালায় সম্পর্কের টানাপড়েনকে কেন্দ্র করে গোলমালে বান্ধবীর সামনে আত্মঘাতী হন এক যুবক। অতীতে সিকে ব্লকের একটি বাড়িতে বেসরকারি কলেজের অতিথিশালায় এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আবার, বিজে ব্লকের একটি অতিথিশালায় পঞ্জাব থেকে আসা অতিথিরা নিজেদের মধ্যেই গুলি বিনিময় করায় ভয় পেয়ে যান আশপাশের বাসিন্দারা। নিউ টাউনের একটি আবাসনে ভাড়ার ফ্ল্যাটে ঘাপটি মেরে ছিল পঞ্জাবের গ্যাংস্টারেরা। এসটিএফের গুলিতে তাদের মৃত্যু হয়। এক সময়ে ভিআইপি রোডের উপরে যখন ডান্সবার চালু ছিল, তখন সেখানকার নর্তকীদের বিভিন্ন অতিথিশালায় আটকে রাখার অভিযোগও উঠেছে। এত কিছু সত্ত্বেও বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় বাড়িতে বা অন্যত্র চলা বেআইনি অতিথিশালার রমরমা ঠেকানো যায়নি। এই ক্ষেত্রে নিজেদের অপারগতা কার্যত মানছেন পুর কর্তৃপক্ষও।

বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা জানান, সরাই আইনের অধীনে ক’টি অতিথিশালার লাইসেন্স রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, ‘‘সরাই আইন মেনে ওই সব অতিথিশালা চলছে কি না, তা খোঁজ নিতে বলা হয়েছে থানাগুলিকে। কয়েকটি অতিথিশালায় নোটিসও পাঠানো হয়েছে।’’

কী এই সরাই আইন? আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ব্রিটিশ আমলে রাস্তার ধারে পথিকদের আশ্রয় দেওয়ার নামে তাঁদের সরাইখানায় নিয়ে গিয়ে সর্বস্ব লুট করে নেওয়া হত। তার পরেই এই আইনের প্রচলন। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে এই আইনের প্রয়োগ বিশেষ হয় না ঠিকই। কিন্তু অতিথিশালাগুলির ক্ষেত্রে সরাই আইনের আওতায় লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা উচিত। একমাত্র তা হলেই ভুঁইফোঁড় অতিথিশালা বন্ধ করা যেতে পারে।’’

জানা গিয়েছে, বিধাননগরের এমন অতিথিশালাগুলিতে ঘর ভাড়া নিতে বুকিং হয় অনলাইনে। সরকারি কোনও একটি পরিচয়পত্র থাকলে বিশেষ কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় না। অতীতে এমনও ঘটেছে, যেখানে অতিথিশালায় পুলিশ যাওয়ায় মালিক সংশ্লিষ্ট অতিথিকে তাঁর আত্মীয় বলে দাবি করেছেন।

সেই প্রসঙ্গ টেনে বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, পুরসভা খোঁজ নিতে গেলে অতিথিকে আত্মীয় সাজানোর চেষ্টা হয়। তিনি বলেন, ‘‘আবাসিক বাড়িতে বাণিজ্যিক কাজের জন্য সম্পত্তিকর ফাঁকি দিতেই পুরসভাকে জানানো হয় না। কিন্তু মালিকদের মনে রাখা উচিত, অতিথির থেকে তাঁরাও বিপদে পড়তে পারেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement