বেহাল: খানাখন্দে ভরা রাস্তায় বেরিয়ে রয়েছে কেব্লের পাইপ। বৃহস্পতিবার, দমদম রোডে এখানেই ঘটে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র
লরির ধাক্কায় মৃত্যু হল এক পুলিশকর্মীর। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে চিড়িয়ামোড়ের কাছে দমদম রোডে। মৃতের নাম বীরেশ্বরচন্দ্র রায় (৪৫)। তিনি কাশীপুর থানায় অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর পদে কাজ করতেন। বাড়ি রায়গঞ্জে। থাকতেন কাশীপুর থানার ব্যারাকে। ওই ঘটনায় জখম হয়েছেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁর নাম শুভজিৎ চন্দ্র। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে শুভজিৎকে অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার রাতের ডিউটি ছিল শুভজিৎ ও বীরেশ্বরবাবুর। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে দমদম রোডে মোটরবাইকে চেপে টহল দিচ্ছিলেন তাঁরা। বাইকটি চালাচ্ছিলেন শুভজিৎ। পিছনে ছিলেন বীরেশ্বরবাবু। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভোর পাঁচটা নাগাদ রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষে যাচ্ছিল বাইকটি। হঠাৎ পিছন দিক থেকে আসা একটি লরি বাইকে ধাক্কা মারলে আরোহী দু’জনেই ছিটকে পড়েন। শুভজিৎ রাস্তার বাঁ দিকে। বীরেশ্বরবাবু ডান দিকে। তখনই সেই লরির পিছনের চাকা তাঁর মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। চিৎপুর থানার পুলিশ লরিটিকে সঙ্গে সঙ্গে আটক করে। গ্রেফতার করা হয় চালক গুড্ডু সাউকে। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এ দিন আদালতে তোলা হলে তাঁকে ন’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠান বিচারক।
এ দিনের এই দুর্ঘটনার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা বেহাল রাস্তাকেই দায়ী করেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যে জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, রাস্তার সেই অংশটি খানাখন্দে ভরা। একটি মোটা কেব্লের পাইপ বেরিয়ে রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, খানাখন্দের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে মোটরবাইকের চাকায় কেব্লের পাইপ জড়িয়ে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই জায়গায় খানাখন্দ তো রয়েছেই, তার উপরে রাস্তার পাশে নিকাশির কাজ চলছে। রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে বড় বড় পাইপ। স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘গোটা এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ চলছে। কিন্তু পাইপ বসানোর পরেও রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে না। তাই এমন ঘটনা ঘটছে।’’ এ দিন জখম সিভিক ভলান্টিয়ার শুভজিতের কাশীপুরের বাড়িতে গেলে মা অণিমাদেবী বলেন, ‘‘আমার একটাই ছেলে। স্বামী অসুস্থ। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। মাস কয়েক আগে চাকরি পেয়ে পুরো সংসার সামলাচ্ছে। এই ঘটনায় ও খুব মুষড়ে পড়েছে।’’ ঘটনার অভিঘাতে শুভজিৎ অবশ্য কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পুষ্পালি সিংহ এই দুর্ঘটনার জন্য পুর প্রশাসনকেই দায়ী করছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার গোটা ওয়ার্ড জুড়ে রাস্তা খুঁড়ে নিকাশি লাইনের পাইপ বসানো হচ্ছে। কিন্তু কাজের পরে রাস্তা সারানো হচ্ছে অত্যন্ত দায়সারা ভাবে। গত ১২ জুন বরো কমিটির বৈঠকে এই সমস্যার কথা তুলেছিলাম। কিন্তু আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করেননি।’’
দমদম রোডে নিকাশি লাইনের কাজ করছে ‘কেইআইআইপি’ (কলকাতা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম)। ওই সংস্থার ডিজি সৌম্য গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিৎপুর রোডে দিন তিনেক আগে পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। পাইপ বসানোর পরে রাস্তায় পিচ ঢালতে একটা সময় দেওয়া দরকার। বৃহস্পতিবার রাতেই খোঁড়া অংশে পিচ দেওয়ার কথা ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে তার আগেই এই ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আগামী দিনে রাস্তা খোঁড়ার পরে নিয়মমতো রাস্তা সংস্কার যাতে হয়, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকব।’’