উদ্ধার হওয়া ‘কালু’। —সংগৃহীত।
কালুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কালুকে পাঠানো হয়েছিল চিকিৎসার জন্য। কিন্তু ফেরার সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে কোনও ভাবে নেমে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছিল পথ। তার পর কলকাতার অলি, গলি, তস্য গলি— কোথায় যে সে চলে গিয়েছিল, ধরা যায়নি। মঙ্গলবার দুপুরে কালুর খোঁজ মিলেছিল। সন্ধ্যার পর সত্যি সত্যি কালু ফিরল তার পাড়ায়। গাড়িতে চেপে।
কালু সল্টলেকের করুণাময়ী আবাসনের সামনের একটি পথকুকুর। তার জন্য গত চার দিন ধরে হন্যে হয়ে ঘুরে বেরিয়েছিলেন করুণাময়ী আবাসনের বাসিন্দা তথা তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী সৌভিক চক্রবর্তী এবং তাঁর স্ত্রী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালুকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন সৌভিক।
সৌভিক কুকুরপ্রেমী। বাড়িতে পোষ্য রয়েছে। তা ছাড়া পথকুকুরদের প্রতিও তাঁর ভালবাসা সমান। সকাল-বিকেল খেতে দেন, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করান। আনন্দবাজার অনলাইনকে সৌভিক বলেন, ‘‘কালুর শরীরের একটি অংশে ঘা হয়েছে। বারুইপুরের একটি সংস্থার মাধ্যমে ওর চিকিৎসা চলছিল। শুক্রবার পাঠানো হয়েছিল কেমো থেরাপির জন্য। কিন্তু ফেরার সময় উল্টোডাঙার মুচিবাজার এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স থেকে অন্য একটি কুকুরকে নামানোর সময়ে কালুও নেমে ছুট লাগায়।’’ তার পর অনেক খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। শুক্রবারের পর থেকে সৌভিক ওই এলাকা চষে ফেলেছেন। বাজার, মাংসের দোকান কিচ্ছু বাদ দেননি। কিন্তু কালুকে দেখা যায়নি। কুকুরপ্রেমী দম্পতি কালুর ছবি-সহ লিফলেটও বিলি করেছিলেন মুচিবাজার, মানিকতলা ও সংলগ্ন এলাকায়।
অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে কালুর কথা জানতে পারেন সৌভিক। তাঁর প্রতিবেশী এক তরুণী তাঁকে খবর দেন, ফেসবুকে কালুর ছবি দিয়ে সুনির্মল দত্ত নামের এক ব্যক্তি পোস্ট করেছেন। তার পর সুনির্মলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সৌভিক। তাঁর বাড়ি উত্তর কলকাতার পাইকপাড়া এলাকায়। তিনি জানান, তাঁর পাড়ার এক যুবক কালুকে গত দু’দিন ধরে যত্নে রেখেছেন। তাঁর নাম বাবলু দাস। সেখানে পৌঁছন সৌভিক। কালুও অভিব্যক্তিতে বুঝিয়ে দেয়, তার চেনা লোক এসে গিয়েছেন। অবশেষে কালুকে গাড়িতে চাপিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন সৌভিক। কিন্তু মনখারাপ কালুকে দু’দিন ধরে আগলে রাখা বাবলুর। তবে কালু নিজের পাড়ায় ফিরছে, এটাই ছিল তার মনখারাপের মলম। সৌভিকও জানিয়েছেন, বাবলু না থাকলে তিনি কালুকে পেতেন না।