ছবি: সংগৃহীত
শহরের বায়ুদূষণ কমাতে মধ্য কলকাতার বাণিজ্যিক এলাকার গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থায় বদল আনতে চায় পুলিশ। লালবাজারের খবর, বড়বাজার, পোস্তা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার (পার্কিং) ফলে অন্য গাড়ির গতি ঢিমে হয়ে যায়। তার ফলে দূষণ বাড়ে। পার্কিং ব্যবস্থা বদলে গাড়ির গতি বাড়ানোই পুলিশের উদ্দেশ্য। তাতে দূষণও কমবে।
মহানগরের বায়ুদূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালত কয়েক দফা নির্দেশ দিয়েছে। তার ভিত্তিতেই নবান্ন একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি করেছে। তাতে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ছাড়াও রয়েছেন পুরসভা, কেএমডিএ, পুলিশের আধিকারিকেরা। সম্প্রতি সেই কমিটির বৈঠকে পার্কিং ব্যবস্থার বদল নিয়ে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
পরিবেশকর্মীদের দাবি, রাস্তায় যেখানে-সেখানে পার্কিং করার ফলে রাস্তায় গাড়ির গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাতে ইঞ্জিনের উপরে চাপ পড়ে। অতিরিক্ত ধোঁয়া নির্গমনের ফলে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ বাড়ে। কলকাতার এই সমস্যা পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)-এর সমীক্ষাতেও উঠে এসেছিল। সেখানেও মধ্য কলকাতার যানজটকে দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন সমীক্ষক-গবেষকেরা। ‘সিএসই’-র এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘কলকাতার মতো শহরে নির্দিষ্ট পার্কিং পলিসি গড়ে তোলা খুবই দরকার। দিল্লিতেও এটা করা হয়েছে। উন্নত পার্কিং পলিসি হলে তা পার্কিংয়ের সুবিধাকে যেমন বিস্তৃত করবে, তেমনই পার্কিংয়ের অতিরিক্ত চাহিদাকেও নিয়ন্ত্রণ করবে।’’ আমেরিকার মতো দেশের শহরে গাড়ি পার্কিংয়ের খরচ অনেক বেশি। তার ফলে শহরে অনেকেই গাড়ি নিয়ে আসতে চান না। এ দেশেও শহরে পার্কিংয়ের দর বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন পরিবেশকর্মীদের অনেকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য শহরকে প্রথমে পাঁচটি এলাকায় ভাগ করা হয়েছিল। পরে বন্দরকে একটি পৃথক এলাকা হিসেবে দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই দিনের বৈঠকে বড়বাজার, পোস্তা, জোড়াবাগান, বৌবাজার, শিয়ালদহের মতো এলাকাকে বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে ধরা হয়েছে। ওই এলাকার বর্তমান পার্কিং ব্যবস্থা বদলে ফেলে কী ভাবে অন্যত্র পার্কিং তৈরি করা যায়, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বৈঠকে পুরসভার পার্কিং বিভাগের আধিকারিক ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই ওই সব এলাকার পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তাবটি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পরের বৈঠকে আলোচনা হবে। এ ছাড়া আরও কী ভাবে দূষণ কমানো যেতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’’
পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং পুলকারের ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রেও সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই পুলিশের তরফে পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং পুলকারের ব্যবহার কমিয়ে শাটল বাস ব্যবহারের পরামর্শ গিয়েছে বেসরকারি স্কুলগুলিতে।
তবে অনেকেই বলছেন, মধ্য কলকাতার এই বাণিজ্যিক এলাকার পার্কিং নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। পুলিশকে বারবার বলেও লাভ হয়নি। এ বার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এই সমস্যা কবে মেটানো হয়, সেটাই দেখার।