কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
প্রায় ১৪০ কোটির দেশে করদাতার সংখ্যা মাত্র ৮.২ কোটি! কেন্দ্রীয় আয়কর দফতরের তথ্য এমনটাই বলছে। দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, নাগরিকদের এক শ্রেণির মধ্যে কর দেওয়ার প্রতি অনীহা রয়েছে। ওই অংশ করকে ‘বোঝা’ হিসেবে মনে করেন। যার ব্যতিক্রম নয় কলকাতাও। কারণ, শহরের নাগরিকদের কত শতাংশ সম্পত্তিকর দেন, সেই হিসাব করতে বসে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছেন, বৈধ করদাতার প্রায় ২৮ থেকে ৩০ শতাংশেরই কর হয় বকেয়া রয়েছে, অথবা তাঁরা কোনও না কোনও কারণে কর দেন না।
পুরসভার সাম্প্রতিক হিসাব বলছে, শহরে করদাতার সংখ্যা প্রায় ন’লক্ষ। তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশ সম্পত্তিকর দেন। অর্থাৎ, কর দেন না কিংবা বকেয়া পড়ে আছে, এমন করদাতার সংখ্যা ২.৫ থেকে ২.৭ লক্ষ। চলতি অর্থবর্ষে রাজস্ব আদায়ে কোন কোন ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে, কী ভাবে রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়াতে হবে, সেই হিসাব করতে বসেই এমন তথ্য উঠে এসেছে। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘কর না দেওয়া ৩০ শতাংশের মধ্যে একটা বড় অংশের সম্পত্তিকর বকেয়া। বাকিদের নিয়মিত কর দেওয়ায় ছেদ পড়েছে। একই সঙ্গে মূল্যায়ন না হওয়া সম্পত্তিও রয়েছে। সম্পত্তির মূল্যায়নের পাশাপাশি বকেয়া কর আদায়ে আমরা জোর দিচ্ছি।’’
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, নাগরিকদের একাংশের আয়ের অঙ্ক আয়কর-ধাপের (স্ল্যাব) আওতায় আসে না ঠিকই। কিন্তু, যাঁদের আয়ের পরিমাণ আসে, তাঁদের মধ্যেও কর দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা রয়েছে। যেমন পুর প্রশাসনের সমীক্ষাতেই ধরা পড়েছে, বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরির পরে সেটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার শংসাপত্র (কমপ্লিশন সার্টিফিকেট বা সিসি) হাতে পেয়েও অনেকেই সম্পত্তি মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেননি। ফলে, এমন ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুরসভাকে সেই সম্পত্তির মূল্যায়ন করতে হচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় মূল্যায়নের জন্য সামগ্রিক পদ্ধতিকে পাঁচ বছর সময়সীমায় ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, প্রাথমিক ভাবে ২০১৭ সালের পর থেকে শহরের যে সব বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সিসি পাওয়া সত্ত্বেও সেগুলি মূল্যায়নের জন্য পুরসভায় আবেদন জানানো হয়নি, সেই সংক্রান্ত সব নথি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পাঁচ বছর সময়সীমা ভাগ করার কারণ ব্যাখ্যা করে পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বকেয়া করের বিষয়টি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। অতীতে যত বার বকেয়া কর আদায়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে, তত বারই মাঝপথে দিশাহারা অবস্থা হয়েছে পুরসভার। ফলে কর আদায়ের গোটা প্রক্রিয়া মার খেয়েছে। পুরনো সেই ভুল শোধরাতে পাঁচ বছর অন্তর সময় ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে নথির পাহাড়ে যেমন হারিয়ে যেতে হচ্ছে না, তেমনই কর আদায়ে দ্রুত পদক্ষেপও করা সম্ভব হচ্ছে।
তবে পুর প্রশাসনের একাংশ এ-ও জানাচ্ছেন, নজরদারিতে ফাঁক বা সম্পত্তিকর আদায়ে গাফিলতি থাকার কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ সম্পত্তিকর বকেয়া রয়েছে বহু জায়গায়। সাম্প্রতিক সময়ে কর আদায়ে তুলনামূলক ভাবে গতি এলেও এখনও পুরোটা করে ওঠা যায়নি। পরিস্থিতি বিচার করে পুর কর্তৃপক্ষ কোনও বাড়ি বা আবাসন নির্মাণ হওয়া মাত্র সেটি থেকে সম্পত্তিকর আদায়ের প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা করছেন। সে কারণে বকেয়া করের প্রতিটি ফাইলের জন্য এক জন করে আধিকারিক নিয়োগ করা হয়েছে। যাতে বকেয়া কর কত বাকি রয়েছে, কত দিন ধরে তা বাকি, সেই সব ব্যাপারে সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘বকেয়া আছে বা কর দেন না, এই ৩০ শতাংশ করদাতার কাছ থেকে রাতারাতি কর আদায় করা যাবে না। তাই পুরো প্রক্রিয়া ধাপে ধাপেকরা হচ্ছে।’’