বেপরোয়া গাড়িতে পিষে মৃত্যু দু’জনের

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ সেলিমপুরের দিক থেকে একটি গাড়ি যোধপুর পার্কের দিকে যাচ্ছিল। সেই সময়ে সাইকেল চালিয়ে আসছিলেন পেশায় ছানা বিক্রেতা, ক্যানিংয়ের বাসিন্দা হাসান মোল্লা (৪২)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৩
Share:

শোকগ্রস্ত: ধীরেন রায়ের (ইনসেটে) স্ত্রী কল্যাণী রায়। শনিবার, গোবিন্দপুরে। নিজস্ব চিত্র

বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা একটি গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল এক সাইকেল আরোহী ও এক পথচারীর। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কে। গাড়িচালক স্বপন মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে লেক থানার পুলিশ। চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ সেলিমপুরের দিক থেকে একটি গাড়ি যোধপুর পার্কের দিকে যাচ্ছিল। সেই সময়ে সাইকেল চালিয়ে আসছিলেন পেশায় ছানা বিক্রেতা, ক্যানিংয়ের বাসিন্দা হাসান মোল্লা (৪২)। গাড়িটি প্রথমে সাইকেলে ধাক্কা মারে। হাসান সাইকেল থেকে পড়ে গেলে গাড়িটি তাঁর বুকের উপর দিয়ে চলে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুত গতিতেই ওই গাড়ি এর পরে ফুটপাতে উঠে যায়। সেখানে বসে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় গাড়িচালক ধীরেন রায় (৪০)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িটি ধীরেনকে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে প্রায় পঞ্চাশ মিটার নিয়ে যায়। তার পরে ফুটপাতে উঠে গিয়ে একটি বাড়ির কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে দেয়। সেই কাঁটায় গাড়িটির চাকা ফেটে যায়। সেই সময়ে গাড়ি নিয়ে চালক পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় বাসিন্দারা সেটি আটকে দেন। চালককে ধরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসান ও ধীরেনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

ঘটনাস্থলের পাশেই রয়েছে একটি রিকশা স্ট্যান্ড। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, রিকশাচালক সুবল নাইয়া বললেন, ‘‘গাড়িটি যে ভাবে পরপর দু’জনকে ধাক্কা মেরে ফুটপাতে উঠে যায়, তাতে আমরা হকচকিয়ে যাই। গাড়ির চাকা কাঁটাতারে জড়িয়ে ফেটে যায়। চালক পালাতে গেলে আমরাই চিৎকার করি। তখন আশপাশের সকলে ছুটে এসে ওকে ধরে ফেলেন।’’ চালককে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গাড়িটি লেক থানার পুলিশ আটক করেছে।

Advertisement

স্ত্রী ও দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে গোবিন্দপুরের একচিলতে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ধীরেন। এ দিন সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, স্ত্রী কল্যাণী বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘিরে রয়েছেন। আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে এর ফাঁকেই ওই মহিলা বললেন, ‘‘ওঁর রোজগারেই তো সংসার চলত। এ বার দুই ছেলেকে নিয়ে কী ভাবে বাঁচব!’’ মৃতের দাদা বিমল রায় বললেন, ‘‘ভাই শুক্রবার সন্ধ্যায় মালিকের বাড়িতে গাড়ি রেখে যোধপুর পার্কের মোড়ে ফুটপাতে বসে ছিল। পাড়ার লোকেরা ফোন করে খবর দিতেই ছুটে আসি। এ রকম যেন কারও না হয়।’’ লেক থানার পুলিশ ধৃত গাড়িচালকের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের তরফে বারবার সাবধানে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো রুখতেও একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। চালকেরা সচেতন না হলে কাজের কাজ কিছু হবে না।’’

এ দিন ধৃত গাড়িচালক স্বপনকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৮ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল জানান, শুক্রবার রাতে অভিযুক্ত চালকের বাড়িতে কিছু একটা নিয়ে অশান্তি হয়েছিল। তার পরেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement