Pet Monkey

পোষ্য বাঁদর বেঁচে আছে তো? হন্যে হয়ে খুঁজছেন যুবক

সাহেব ও তাঁর স্ত্রী জানান, বছর সাতেক আগে বালিগঞ্জ স্টেশনের রেললাইন থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন বাঁদর শিশুটিকে। ঠিক ভাবে চলতে না শেখা সেই বাচ্চাটি আহত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় রেললাইনে পড়ে ছিল।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৩ ০৫:২৯
Share:

স্নেহ: ছেলে ও কিটিকে নিয়ে সাহেব লস্কর। —নিজস্ব চিত্র।

আইনি জটে বছর সাতেকের সম্পর্কে ‘ছেদ’ পড়েছে। পুলিশকর্তার ‘শাসনে’ আদরের পোষ্য কিটিকে তুলে দিতে হয়েছিল পুলিশের হাতে। কিন্তু তার পরে মাস পেরিয়েছে। ফিরে পাওয়া তো দূর, পোষ্য বাঁদরটি কোথায় আছে, তারও খোঁজ নেই। পোষ্যকে দেখার আশায় ছেলে কোলেই বিভিন্ন দফতরের পাশাপাশি শহর সংলগ্ন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরছেন যুবক। আজন্ম কখনও জঙ্গলে না ঘোরা কিটি বেঁচে আছে তো? আশঙ্কা যাচ্ছে না যুবকের।

Advertisement

বছর ত্রিশের ওই যুবকের নাম সাহেব লস্কর। পেশায় রাসবিহারী-বালিগঞ্জ রুটের অটোচালক। তবে বাড়তি রোজগারের আশায় মাঝেমধ্যে তিনি বেরিয়ে পড়েন প্লাস্টিক কুড়োনোর কাজে। বালিগঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডের ঝুপড়িতে স্ত্রী এবং বছর দুয়েকের ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। কিন্তু অভিযোগ পেয়ে তাঁদের ছোট্ট সংসার থেকে পোষ্য বাঁদর কিটিকে নিয়ে যায় পুলিশ।

সাহেব ও তাঁর স্ত্রী পিঙ্কি লস্কর জানান, বছর সাতেক আগে বালিগঞ্জ স্টেশনের রেললাইন থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন বাঁদর শিশুটিকে। ঠিক ভাবে চলতে না শেখা সেই বাচ্চাটি আহত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় রেললাইনে পড়ে ছিল। তার বাঁ হাতের পাশাপাশি ডান চোখে আঘাত ছিল। সাহেব বলেন, ‘‘ওই ভাবে পড়ে থাকলে মারা যাবে ভেবেই আমি ওকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। বেহালার একটি পশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে বেশ কয়েক দিন চিকিৎসার পরে ও সুস্থ হয়। তবে ওর একটা চোখ এবং হাতের কর্মক্ষমতা হারিয়ে যায়। তার পর থেকে ও আমাদের কাছেই থাকত। বিয়ের প্রথম কয়েক বছরে আমাদের কোনও সন্তান না হওয়ায় নিজের মেয়ের মতোই রাখতাম আমরা। নাম দিই কিটি।’’

Advertisement

সাহেব জানান, কিটিকে নিয়ে কোনও দিন খেলা দেখাননি তিনি। সারা দিন ঝুপড়ি ঘরেই রেখে দিতেন তাকে। বাড়িতে যা হত, তা-ই খেত কিটি। পিঙ্কি বলেন, ‘‘প্রথম দিকে ওকে বাইরেই ছেড়ে রাখতাম। বাসস্ট্যান্ডে ঘোরাঘুরি করত। কিন্তু কেউ ওকে বিরক্ত করলে মাঝেমধ্যে রেগে যেত। রেগে গিয়ে যদি কোনও দিন কাউকে কামড়ে দেয়, সেই ভয়েই তার পর থেকে সন্ধ্যায় বাইরে বার করলে গলায় বেল্ট বেঁধে রাখতাম।’’

এই বেঁধে রাখা নিয়েই শুরু সমস্যা। সাহেব জানান, ২০ জুলাই সন্ধ্যায় গাড়ি নিয়ে এক জন বাজারে এসেছিলেন। তিনি বেঁধে রাখা বাঁদরটিকে দেখে তাঁদের ধমকাতে শুরু করেন। নিজেকে পুলিশের কর্তা বলে পরিচয় দিয়ে সোজা গড়িয়াহাট থানায় ফোন করেন ওই ব্যক্তি। সাহেবের কথায়, ‘‘কিছু ক্ষণ পরে পুলিশ এবং বন দফতরের লোকজন এসে কিটিকে নিয়ে চলে যান। পুলিশ থেকে শুরু করে ওই ব্যক্তির হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেছিলাম। আমরা ওকে নিয়ে খেলা দেখাই না, সেটাও বলি। কিন্তু কেউ কোনও কথা শোনেননি। শুধু বলা হল, তিন মাস বন দফতরে রেখে ওকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।’’

যদিও তার পর থেকে তাঁর পোষ্য বাঁদরের কোনও খোঁজ নেই বলে জানাচ্ছেন সাহেব। এক পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গড়িয়াহাট থানায় গেলে কিটিকে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। তখন থেকেই আদরের কিটিকে এক বার দেখার আশায় বিভিন্ন দফতরের পাশাপাশি সল্টলেকের বনবিতানে ঘুরছেন সাহেব। তাঁর কথায়, ‘‘সপ্তাহখানেক আগে বনবিতানে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওখান থেকে একাধিক বাঁদরকে কয়েক দিন রেখে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ও তো জঙ্গলে কী ভাবে থাকতে হয়, সেটাই শেখেনি। বাঁচবে কী করে?’’ আশঙ্কা যাচ্ছে না সাহেবের।

পশু অধিকার আন্দোলনের কর্মী রাধিকা বসুও বলেন, ‘‘যে বাঁদর সাত বছর ধরে বাড়িতে ছিল, সে আদৌ জঙ্গলে থাকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই। জঙ্গলে ছাড়ার আগে বন দফতরের এটা দেখা উচিত। যদি জঙ্গলে গিয়ে বাঁদরটি না বাঁচে, তা হলে তার দায় কে নেবে? বন দফতরের উচিত, এই ধরনের পোষ্যদের একটি রেসকিউ সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করা।’’ যদিও গোটা বিষয়ে বন দফতরের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘বাঁদর পোষার তো কোনও নিয়ম নেই। তবে এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement