ওয়েবসাইটের নম্বরে ফোন করে, টাকা দিয়ে বুকিং করার পরে নির্দিষ্ট দিনে হোটেলে গিয়ে অনেকে বুঝতে পারেন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতীকী ছবি।
জনপ্রিয় একটি বেকারির ওয়েবসাইট থেকে নম্বর পেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। সেখানে ফোন করে বড়দিনের আগে কেকের বরাত দেন তিনি। দাম মিটিয়ে দিয়েছিলেন অনলাইনে। কিন্তু কেক আসা তো দূর, ফোন করলেই আরও টাকা পাঠানোর ‘আবদার’ শুনতে হচ্ছে। এমনকি, টাকা ফেরতের নামে লিঙ্ক পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করা হচ্ছে!
প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরেই বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে ইমেলে অভিযোগ দায়ের করেন বাঘা যতীন এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি। বড়দিনের আগে অনলাইনে পাওয়া নম্বরে ফোন করে কেকের বরাত দিতে গিয়ে অনেককেই এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। লালবাজারেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘ওয়েবসাইট দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সেটি ভুয়ো! ফোন করতেই মেনু কার্ড পাঠিয়ে দিয়েছিল। ওদের পাঠানো লিঙ্কে টাকা পাঠালেও জানানো হয়, তা যায়নি। অন্য একটি নম্বরে টাকা পাঠাতে বলার পাশাপাশি আগের টাকা ফেরত আসবে বলে দাবি করা হয়। এর পরে রেজিস্ট্রেশনের নাম করে টাকা হাতানোর ফন্দি করেছিল প্রতারকেরা।’’ যদিও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ অবশ্য তদন্ত শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে।
যে সংস্থার নামে ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল, শুক্রবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ম্যানেজার বলেন, ‘‘ভুয়ো ওয়েবসাইটে যে নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটি আমাদের নয়। বিষয়টি জানতে পেরে আগেই লালবাজারে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। গত কয়েক দিনে আমাদের কাছে একাধিক অভিযোগ আসার পরে ফের পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশও যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করেছে।’’
দিনকয়েক আগে শহরের একাধিক হোটেলের ওয়েবসাইট নকল করে কার্যত একই রকম প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল। ওয়েবসাইটের নম্বরে ফোন করে, টাকা দিয়ে বুকিং করার পরে নির্দিষ্ট দিনে হোটেলে গিয়ে অনেকে বুঝতে পারেন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এমনকি, কলকাতা থেকে ভিন্ রাজ্যের হোটেল বুকিং করেও প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন কয়েক জন। বড়দিন এবং বর্ষশেষের আগে প্রতারণার কায়দা বদলেছে বলে মনে করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞেরা। সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এটা আসলে সাইবার অপরাধের মুখোশ বদল। অনলাইনে পাওয়া কোনও নম্বরে টাকা পাঠানোর আগে যাচাই করে নিতেই হবে। সতর্ক না হলেই মুশকিল।’’ লালবাজারের এক পুলিশকর্তা অবশ্য বললেন, ‘‘সাইবার অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে। এই অপরাধ কমাতে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার চলছে। সেই সঙ্গে অপরাধের শিকড়ে পৌঁছতে পুলিশের তরফেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’