প্রতীকী ছবি।
যে সব গ্রাহকের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড রয়েছে, শহরের সব সরকারি হাসপাতাল-সহ কিছু নার্সিংহোম এবং বেসরকারি হাসপাতালে তাঁরা চিকিৎসার জন্য ভর্তি হলে কোনও খরচ দিতে হবে না। সেই গ্রাহকের চিকিৎসা-খরচ (৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত) সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমকে মিটিয়ে দেবে সরকারই। বারবার এই কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও ওই প্রকল্পে তালিকাভুক্ত একাধিক বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শর্ত না-মানার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি উত্তর কলকাতার একটি নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত এক গ্রাহকের থেকে চিকিৎসা-খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, বাকি টাকা না মেটালে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাছে কৈফিয়ত তলব করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সূত্রের খবর, নিজেদের ভুল স্বীকার করে রোগীকে টাকা ফেরত দিয়েছে ওই নার্সিংহোম।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি শ্যামবাজারের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন উল্টোডাঙার এক বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রীর কথায়, ‘‘নার্সিংহোমের সিসিইউ-এ ভর্তি করা হয় আমার স্বামীকে। সেটি স্বাস্থ্যসাথীর তালিকায় আছে জেনেই ওঁকে ভর্তি করেছিলাম। পরদিন নার্সিংহোম থেকে আমাকে জানানো হয়, ৫৪ হাজার টাকা বিল হয়েছে। আমি বলি, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড রয়েছে। তা হলে টাকা দিতে হবে কেন? কিন্তু ওঁরা তা দেখতে চাননি। বাধ্য হয়ে আমরা ২০ হাজার টাকা মেটাই।’’ হয়রানির অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। ওই মহিলার আরও অভিযোগ, বাকি টাকা না মেটালে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে তাঁদের জানিয়ে দেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।
এলাকার কাউন্সিলর মারফত স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পেয়েছিল ওই রোগীর পরিবার। রোগীর স্ত্রী বলেন, ‘‘কাউন্সিলর অনিন্দ্য রাউতের কাছে গিয়ে পুরো ঘটনাটি জানাই।’’ খবর পৌঁছয় মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছেও। তিনি বিষয়টি জেনে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা সঞ্জয় বনশলকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই রাতেই স্বাস্থ্য দফতরের কয়েক জন অফিসার পৌঁছে যান নার্সিংহোমে। কেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখানোর পরেও রোগীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, তার ব্যাখ্যা চান। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, এর পরেই ভুল স্বীকার করে নেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। যে ২০ হাজার টাকা রোগীর পরিবারের থেকে নেওয়া হয়েছিল, তা তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
শ্যামবাজারের এই ঘটনাটির প্রতিকার হলেও শহরের বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে স্বাস্থ্যসাথী-র কার্ড থাকা গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘‘যে সব বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম লিখিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে শর্ত মেনে চলতে হবে। তার পরেও যদি ওই কার্ড থাকা কোনও গ্রাহকের থেকে চিকিৎসার খরচ বাবদ টাকা নেওয়া হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল করবে স্বাস্থ্য দফতর।’’