কলকাতায় এমন প্রতারণার একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে বলে খবর। প্রতীকী ছবি।
চিৎকার-চেঁচামেচিতে হোটেলের সমস্ত কর্মী চলে এসেছেন রিসেপশনের সামনে! ব্যাগপত্র নিয়ে এক দম্পতি যত বার ঘরের বুকিং আছে বলে দাবি করছেন, তত বারই হোটেলের খাতা দেখিয়ে উল্টো সুরে কথা বলছেন ম্যানেজার। ওই দম্পতির বুকিংয়ের অগ্রিম বাবদ কয়েক হাজার টাকা তো দূর, এক টাকাও হোটেলের অ্যাকাউন্টে না ঢোকার প্রমাণস্বরূপ মোবাইলে মেসেজ খুলে দেখাতে শুরু করেছেন তিনি। দীর্ঘ তর্কাতর্কির পরে অবশ্য ভুল ভাঙল দম্পতিরই! নতুন করে হোটেলে টাকা দেওয়ার পাশাপাশি প্রতারকের পাতা ফাঁদে কী ভাবে পা পড়ল, খোঁজ শুরু হল তার উত্তরেরও।
দিনকয়েক আগে মধ্য কলকাতার একটি হোটেলের এই ঘটনা শুধু নয়, কলকাতায় এমন প্রতারণার একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে বলে খবর। প্রাথমিক তদন্তে লালবাজারের তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, গুগল সার্চে আসা বিভিন্ন হোটেলের ফোন নম্বর বদলে ফেলে, কখনও আবার হোটেলের নামে ভুয়ো ওয়েবসাইট বানিয়ে প্রতারণা-চক্র চালানো হচ্ছে। উৎসবের মরসুম থেকে শহরে ভিন্ রাজ্যের বহু মানুষ যেমন আসছেন, তেমনই অনেকেই বাইরে যাচ্ছেন বেড়াতে। অতিমারির পরে বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় প্রতারণার ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়ানোর এমন অভিযোগও বেশি সামনে আসছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
কিন্তু কী ভাবে সংঘটিত হচ্ছে অপরাধ? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনলাইনে কোনও হোটেলের খোঁজ করলে ‘গুগল সার্চ কার্ড’-এ একাধিক হোটেলের নাম আসে। যেখানে হোটেলের নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা-সহ ম্যাপে তার অবস্থানও দেওয়া থাকে। প্রতারকেরা হোটেলের বাকি সব তথ্য এক রেখে শুধু নম্বর বদলে নিজেদের নম্বর দিয়ে দিচ্ছে। ফলে অনলাইনে হোটেল খুঁজতে গিয়ে কেউ ভুয়ো নম্বরে ফোন করলে অজানতেই ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন। কখনও মোটা অঙ্কের ছাড়ের কথা বলে, আবার কখনও বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলে গ্রাহককে রাজি করিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে অগ্রিম বাবদ টাকা দিতে বলছে প্রতারকেরা। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময়ে গ্রাহকের মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ইতিমধ্যেই এই ধরনের একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
সামনেই বছর শেষের উৎসবের মরসুম। বহু মানুষ এই সময়ে কলকাতায় আসেন। ফলে চিন্তা বাড়ছে ভ্রমণ ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। ভ্রমণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘বছর শেষে এমনিতেই বুকিংয়ের চাপ থাকে। করোনার জন্য দু’বছর কার্যত সব কিছু বন্ধ থাকার পরে এই চাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। এটারই সুযোগ নিচ্ছে জালিয়াতেরা।’’
লালবাজার যদিও ইতিমধ্যেই সতর্কতামূলক প্রচার শুরু করেছে। সেই সঙ্গে অপরাধ ঠেকাতে গুগলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও লালবাজার সূত্রের খবর। এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, সব হোটেলের নম্বর যে পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা নয়। কয়েকটি হোটেলের নম্বর বদলে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে। গুগল থেকে পাওয়া নম্বর এক বার যাচাই করে নিলেই প্রতারণার আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়। সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘অনলাইনে পাওয়া কোনও নম্বর যাচাই করার বিভিন্ন মাধ্যম আছে। এমনকি, বিভিন্ন হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটও থাকে। টাকা দেওয়ার আগে সেখানে গিয়ে নম্বর মিলিয়ে, প্রয়োজনে আর এক বার কথা বলে নিলে প্রতারণার আশঙ্কা কমানো যেতে পারে।’’ লালবাজারের এক পুলিশকর্তা যদিও বললেন, ‘‘বিভিন্ন মাধ্যমে সচেতনতার প্রচার করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলেই দ্রুত তার শিকড়ে পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে। পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সতর্ক হতে হবে।’’