Illegal Construction

অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে খুনই হয়ে যাচ্ছিলেন পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার

বিধাননগর পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানাচ্ছেন, সেই সময়ে রাজারহাটের দিকে কাজ করতেন এক সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। হাতিয়াড়া অঞ্চল থেকে খবর আসে যে, আটঘরার দিকে একটি বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৫:০২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

পুর এলাকায় বেআইনি নির্মাণকাজ বন্ধ করতে গিয়েছিলেন এক ইঞ্জিনিয়ার। কাজ থামানো তো দূর, উল্টে সেই ইঞ্জিনিয়ারকেই ক্লাবের ভিতরে আটকে রেখে ছক কষা হচ্ছিল খুন করে দেওয়ার। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ক্লাবের ভিতর থেকে সেই ইঞ্জিনিয়ারকে উদ্ধার করে। পরে তিনি পুরসভায় লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, আর চাকরিই করতে চান না।

Advertisement

গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের কোপে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট বরোর ইঞ্জিনিয়ারেরা। যা নিয়ে বিভিন্ন পুরসভাতেই ক্ষুব্ধ ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, বাস্তব পরিস্থিতিটা কি কেউ জানেন না? জনপ্রতিনিধির সায় না থাকলে ইঞ্জিনিয়ারদের কত ক্ষমতা যে, বেআইনি নির্মাণে তাঁরা মদত দেবেন? এরই সূত্রে বিধাননগর পুরসভার অন্দরে ভাসতে শুরু করেছে আট বছর আগের রোমহর্ষক এক ঘটনার গল্প। রাজারহাট ও বিধাননগর পুরসভা যুক্ত হয়ে বিধাননগর পুরসভা (কর্পোরেশন) তৈরি হয়েছিল ২০১৬ সালে। দুই পুরসভা যুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে ঘটে সেই ঘটনা।

বিধাননগর পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানাচ্ছেন, সেই সময়ে রাজারহাটের দিকে কাজ করতেন এক সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। হাতিয়াড়া অঞ্চল থেকে খবর আসে যে, আটঘরার দিকে একটি বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। খবর পাওয়ার পরেই সেই অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে আটঘরায় যান ওই সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। এর পরে সেখানে যা ঘটে, তা সিনেমার গল্পের চেয়ে কিছু কম নয়।

Advertisement

ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানাচ্ছেন, বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করতে যাওয়ায় প্রোমোটার এবং পাড়ার ক্লাবের সদস্যদের কোপে পড়েন ওই সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। প্রথমে তাঁর সঙ্গে তাদের ঝগড়া শুরু হয়। তার পরে ধাক্কাধাক্কি। শেষ পর্যন্ত ঘেরাও করার নামে তাঁকে ক্লাবে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে দেওয়া হয়। ওই ইঞ্জিনিয়ার শুনতে পান, বাইরে তলোয়ার, বাঁশ আনার কথা আলোচনা হচ্ছে। তাঁকে খুনের চক্রান্ত করা হচ্ছে অনুমান করে ওই ইঞ্জিনিয়ার কোনও মতে নিজের মোবাইল ফোন থেকে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার কথা জানান। এর পরে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের তৎপরতায় নিউ টাউন থানার পুলিশ গিয়ে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে উদ্ধার করে। পরের দিনই পুরসভায় গিয়ে চাকরিতে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। পুরসভার এক পদস্থ
আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই ঘটনার পরেও অনেক সময়ে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে স্থানীয় ভাবে নানা হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে আধিকারিকদের।’’

সাম্প্রতিক এমনই একটি ঘটনায় পুর আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের হেনস্থার পিছনে এক পুরপ্রতিনিধির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। বিধাননগর পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ছিল একটি বেআইনি ক্লাব। পুরসভা সেটি বেআইনি বলে ঘোষণা করে। তার পরে একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট। সেই ক্লাবের সভাপতি আবার অন্য একটি ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি। ক্লাবের বাড়িটি ভাঙতে গেলে সরকারি আধিকারিকদের শুধু ধাক্কাধাক্কি করাই নয়, তাঁদের গায়ে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে ওই পুরপ্রতিনিধির অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আধিকারিকেরা বহু অলিখিত নির্দেশে সই করে সরকারি সিলমোহর দিতে বাধ্য হন। এর পরে কিছু ঘটলে সেই নির্দেশ যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁরা গা বাঁচিয়ে নেন। তখন দায় এসে পড়ে আধিকারিকদের উপরে। নয়াপট্টির ঘটনার পরে আমরা কোনও অভিযানে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সুরক্ষার সরঞ্জাম কিনে নিচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement