man

আড়াই বছর পরে ঘরে ফিরছেন পথভোলা ‘অঙ্কের মাস্টার’

আড়াই বছর আগে স্যর গুরুদাস ব্যানার্জি হল্ট স্টেশনে ওই যুবককে প্রথম বার যখন দেখা গিয়েছিল, তখন তাঁর মাথা ভর্তি বড় বড় চুল। মুখ ভরা অযত্নে বেড়ে ওঠা দাড়ি।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৩৫
Share:

বিজয় কুমার। নিজস্ব চিত্র।

কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই এক দিন স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পড়েছিলেন তিনি। এর পরে হরিয়ানা থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরের কলকাতায় এসে নামেন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক বিজয় কুমার। ঘরছাড়া ওই যুবককে অবশেষে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং হ্যাম রেডিয়োর সাহায্যে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে পরিবারের কাছে। ছোট ভাইয়ের হাত ধরে মঙ্গলবার বিকেলেই বাড়ির ট্রেন ধরেছেন বছর বত্রিশের বিজয়।

Advertisement

আড়াই বছর আগে স্যর গুরুদাস ব্যানার্জি হল্ট স্টেশনে ওই যুবককে প্রথম বার যখন দেখা গিয়েছিল, তখন তাঁর মাথা ভর্তি বড় বড় চুল। মুখ ভরা অযত্নে বেড়ে ওঠা দাড়ি। প্ল্যাটফর্মেই বসে থাকতেন আর চক বা ইটের টুকরো দিয়ে অঙ্কের জটিল ‘ফর্মুলা’ লিখে যেতেন। কোনও বাচ্চা সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই তাকে বসিয়ে চেষ্টা করতেন অঙ্ক শেখানোর। কিন্তু, কেউ তাঁর নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে চেয়ে থাকতেন শুধু। বলতে পারতেন না কিছুই। কেউ আবার বেশি প্রশ্ন করলে তাঁকে এড়াতে বসে থাকতেন দূরে গিয়ে।

ওই যুবকের এ হেন আচরণ দেখে প্রথমে কিছুটা অবাকই হয়েছিলেন স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। তবে, তিনি যে মানসিক ভারসাম্যহীন, ধীরে ধীরে সকলেই বুঝতে পারেন সেটা। ওই যুবকের নাম-ঠিকানার হদিস পেতে আশপাশের এলাকায় খোঁজখবর শুরু করেন তাঁরা। তাঁর খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও তাঁরাই করেন। সারা দিন স্টেশনে কাটানো ওই যুবককে দেখা যেত, মাঝেমধ্যেই আশপাশের কচিকাঁচাদের পাশে বসিয়ে বিড় বিড় করছেন আর অঙ্কের ফর্মুলা লিখছেন। কখনও আবার তাদের সামনে বসিয়ে আধা হিন্দিতে কিছু বলতে শোনা যেত তাঁকে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘অধিকাংশ বাচ্চাই তো হিন্দি বুঝত না। তবে, উনি যে পড়ানোর চেষ্টা করছেন, এটা বুঝতে পারতাম।’’

Advertisement

প্রায় সাত মাস ধরে এ ভাবেই চলে। স্টেশনই হয়ে ওঠে ওই যুবকের ঘরবাড়ি। এ দিকে, পরিবারের কোনও খোঁজ না পেয়ে ওই যুবকের চিকিৎসার জন্য এলাকার বাসিন্দারাই যোগাযোগ করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। সেই সংস্থার উদ্যোগেই বেলেঘাটার একটি সরকারি হোমে তাঁকে রেখে শুরু হয় চিকিৎসা। এর পরে ওই হোমের তরফেই ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শুরু হয় যুবকের বাড়ির খোঁজ।

হোম কর্তৃপক্ষ জানান, দীর্ঘ চিকিৎসার পরে কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাঁর বাড়ি যে হরিয়ানায়, সেটুকু বলতে পেরেছিলেন ওই যুবক। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই যুবক কিছুটা সুস্থ হতেই হরিয়ানার কয়েকটি জায়গার নাম বলতে পেরেছিলেন। তাই তাঁর পরিবারের খোঁজে আমরা হরিয়ানায় চলে যাই। সেখানে বেশ কিছু দিন খোঁজাখুঁজির পরে জানা যায়, রোহতক এলাকায় বাড়ি তাঁর। পরিবারের তরফে থানায় নিখোঁজ-ডায়েরিও করা হয়েছিল।’’ অম্বরীশের কথায়, ‘‘পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পারি, ওঁর নাম বিজয় কুমার। মেধাবী বিজয় অঙ্ক নিয়ে এমএসসি পাশ করেছেন। কিন্তু কোনও চাকরি জোটাতে না পেরে অবসাদে ভুগছিলেন। তার পরেই দিন দিন অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করেন। এর আগেও একাধিক বার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের লোকজন জানান।’’ অম্বরীশ জানান, আইনি প্রক্রিয়া মেনে ওই যুবককে ঘরে ফেরানোর তোড়জোড়ের পাশাপাশিই চলতে থাকে তাঁকে সুস্থ করার চেষ্টা। মঙ্গলবার তাঁর ভাই কলকাতায় আসেন। রাতেই বিজয়কে নিয়ে ট্রেনে ওঠেন তিনি। অম্বরীশ বলেন, ‘‘বিজয় ভাইকে চিনতে পেরেছেন। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement