বাইকের পিছনে বসে থাকা আলতাবউদ্দিনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। প্রতীকী ছবি।
দুপুরে রাস্তা দিয়ে আসছিল একটি মোটরবাইক। হঠাৎই পিছন থেকে আর একটি মোটরবাইক সেটিকে ধাওয়া করতে শুরু করল। কিছু ক্ষণ পরে সামনের বাইকটির পাশে চলে এল অন্যটি। তার পরেই চলল কয়েক রাউন্ড গুলি! সামনের বাইকে থাকা এক ব্যক্তির নাক ফুঁড়ে দিল একটি গুলি!
কোনও সিনেমার দৃশ্য নয়, বুধবার দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল বজবজ ট্রাঙ্ক রোড। পুলিশ সূত্রের খবর, আদালত থেকে ফেরার পথে এই আক্রমণ হয় শেখ আলতাবউদ্দিন ওরফে হুলতাল নামে এক ব্যক্তির উপরে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাতেই শেখ সৈফুদ্দিন নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশের বক্তব্য, বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের কয়লা সড়ক এলাকায় আলতাবউদ্দিনদের মোটরবাইকের পাশে চলে আসে আর একটি বাইক। এর পরে বাইকের পিছনে বসে থাকা আলতাবউদ্দিনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। প্রথম বাইকটি চালাচ্ছিলেন আলতাবের সঙ্গী আতিয়ার রহমান। গুলি চলার পরেই মোটরবাইক থামিয়ে দেন তিনি। প্রথমে আলতাবকে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, আলতাবউদ্দিনের নাক এফোঁড়-ওফোঁড় করে গুলি বেরিয়ে গিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীদের কথায়, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আলতাবউদ্দিনের বিরুদ্ধে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার একাধিক থানায় সমাজবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। এ দিন আলিপুর আদালতে একটি পুরনো মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে ট্রেনে বজবজ স্টেশনে এসেছিলেন আলতাবউদ্দিন ও আতিয়ার। স্টেশনে রাখা মোটরবাইক নিয়ে নোদাখালি থানার চণ্ডীপুরে যাওয়ার জন্য বজবজ ট্রাঙ্ক রোড ধরেন দু’জনে। কয়লা সড়কের কাছে গুলি চালিয়ে অন্য বাইকটি তীব্র গতিতে সামনের দিকে বেরিয়ে যায়। পুলিশের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দ্বিতীয় মোটরবাইকের পিছনে বসে থাকা শোভরাজ গাজি নামে এক দুষ্কৃতী গুলি চালিয়েছে। তবে, ফুটেজ আরও খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে পুলিশের তরফে। একাধিক ক্যামেরার ফুটেজ থেকে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে, শোভরাজের বাইকটি কোন দিকে গিয়েছে।আতিয়ারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শেখ সৈফুদ্দিন নামে এক দুষ্কৃতীকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।’’
পুলিশ সূত্রের দাবি, আলতাব ও শোভরাজের পুরনো শত্রুতা রয়েছে। শোভরাজের বাড়ি আলতাবের গ্রামের পাশের গ্রাম, মুচিরপোল এলাকায়। মাস দুয়েক আগে মাদক পাচারের মামলায় জেল থেকে জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরেছে শোভরাজ। তার পরেই পুরনো শত্রুতার জেরে এই আক্রমণ বলে তদন্তকারীদের অনুমান। ঘটনার পরে আলতাবউদ্দিনের দাবি, ‘‘প্রতিহিংসার জেরে আমার উপরে আক্রমণ করা হয়েছে।’’ আতিয়ার বলেন, ‘‘আমাদের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছিল। স্টেশন থেকে বেরোনোর পরেই পিছু নিয়েছিল ওই মোটরবাইকটি।’’
ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বজবজের বিধায়ক অশোক দেবের কার্যালয়। এ দিনের ঘটনার পরে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আচমকা কালীপটকা ফাটার মতো কয়েকটা আওয়াজ হয়। তার পরে দেখি, একটি মোটরবাইক থেকে আর একটি চলন্ত মোটরবাইকের উপরে গুলি চালানো হচ্ছে।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন বজবজ পুরসভার চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘শান্তি বজায় রাখা ও অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’