প্রতীকী ছবি।
রাত বাড়লেই প্রকাশ্য রাস্তায় বসত নেশার আসর। মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য এলাকার বাসিন্দাদের ভয় দেখিয়ে চলত তোলাবাজি। মহিলারাও ছাড় পেতেন না ওই মাদকাসক্তদের হাত থেকে। তাঁদেরও উত্ত্যক্ত করা হত নানা ভাবে। অভিযোগ, থানা মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে হলেও পুলিশের ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের। সেই নেশার আসরেই মাদক কেনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলমালের জেরে শুক্রবার রাতে খুন হয়ে গেলেন ১৮ বছরের এক তরুণ। মহরমের রাতে এই ঘটনা ঘটায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ালেও পুলিশ দু’ঘণ্টার মধ্যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নেশার আসরে থাকা নিহতের চার বন্ধুকে গ্রেফতার করে। তাদের সকলেরই বয়স ১৮ থেকে ২০-র মধ্যে।
ঘটনাটি ঘটেছে শিবপুর থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে, ঘোষবাগানের বিপ্রদাস চ্যাটার্জি লেনে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত তরুণের নাম মহম্মদ রইস (১৮)। তিনি শিবপুরের চওড়া বস্তি এলাকার ৫১/১সি কাউস ঘাট রোডের বাসিন্দা ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় রইসকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরাই খবর দেন শিবপুর থানায়। পুলিশ এসে ওই তরুণকে উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, নিহত তরুণের ডান কানের কাছে গভীর ক্ষত ছিল। যা দেখে তাদের সন্দেহ, তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। ওই রাতেই তদন্তে নামে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে তারা। ধৃতদের নাম রাজা আলি, আরিয়ান রাজা খান, মহম্মদ ফৈজল ও বিকাশ বর্মা। তারা সকলেই মহম্মদ রইসের বন্ধু।
ধৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ জানিয়েছে, অন্যান্য দিনের মতো সেই রাতেও বন্ধুদের সঙ্গে নেশা করার জন্য ঘোষবাগানে গিয়েছিলেন ওই তরুণ। সেই সময়ে তাঁর হাতে একটা তলোয়ার ছিল। মাদক কেনা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই রইসের সঙ্গে বাকি তিন জনের গোলমাল চলছিল। ওই রাতে রইসের কাছে মাত্র ১৫০ টাকা থাকায় মাদক কেনার জন্য বাকিদের কাছ থেকে টাকা চান তিনি। তখনই তাঁদের মধ্যে বচসা ও মারামারি বেধে যায়। তদন্তকারীরা জানান, গোলমালের সময়ে রইস তাঁর তলোয়ার দিয়ে এক জনকে হাল্কা আঘাত করেন। সেই দৃশ্য দেখে অন্য এক জন রইসের হাত থেকে তলোয়ার কেড়ে নিয়ে তাঁর ডান কানের পাশে সজোরে আঘাত করে। সেই আঘাতের জেরে ঘটনাস্থলেই পড়ে মৃত্যু হয় ওই তরুণের।
পুলিশ জানায়, নিহত তরুণ চওড়া বস্তি এলাকার এক অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তান। তিনি যে মাদকাসক্ত হয়ে উঠেছেন, বাড়ির লোকেরা তা জানতেন না বলেই দাবি করেছেন। রইসের দাদা মহম্মদ নভিল বলেন, ‘‘ও এলাকায় কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি পড়াশোনাও করত। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাতে কোথায় যেত, কাদের সঙ্গে মিশত, আমরা তা জানতাম না।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মহরমের রাতে ঘটনাটি ঘটায় এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা ছড়ালেও পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতার করায় সমস্যা হয়নি। এলাকায় প্রকাশ্যে নেশার আসর বসলেও স্থানীয় শিবপুর থানা কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, তা আমরা দেখছি।’’