Cyber Crime

Cyber Crime: ১০ হাজারে চিমনি বেচতে গিয়ে খোয়া গেল সাড়ে ৪ লক্ষ

এ দিনের ঘটনা ঘটেছে একটি বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থার এক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

কখনও ‘হ্যাকিং অ্যাপ’-এর মাধ্যমে মোবাইল বা কম্পিউটারের দখল নিয়ে, কখনও টাকা পাঠানোর নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কিউআর কোড পাঠিয়ে, কখনও আবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য জেনে নিয়ে সাইবার প্রতারণা থামছেই না! পুলিশ লাগাতার ধরপাকড় চালালেও বন্ধ হচ্ছে না ভূরি ভূরি এমন অভিযোগ আসা। আরও একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতারিত হয়েছেন বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের দ্বারস্থ হতে হবে। তা হলে টাকা উদ্ধার করা গেলেও যেতে পারে।

Advertisement

এ দিনের ঘটনা ঘটেছে একটি বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থার এক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। আদতে কোন্নগরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি পুণেতে চাকরি করেন। স্ত্রী এবং পুত্রকে নিয়ে তিনি সেখানেই থাকেন। তবে বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হওয়ায় সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে কলকাতায় এসেছেন তিনি। বাঁশদ্রোণী থানা এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়েছেন বাবার জন্য। তিনি জানান, বাড়িওয়ালা শর্ত দিয়েছেন, রান্নাঘরের চিমনি-সহ বেশ কিছু আসবাবপত্র নতুন লাগানো যাবে না। ঘরে আগে থেকেই থাকা জিনিস ব্যবহার করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের চিমনিটি বিক্রি করতে একটি ই-কমার্স অ্যাপে বিজ্ঞাপন দেন ওই ইঞ্জিনিয়ার। অভিযোগ, তার পরেই তিনি খুইয়েছেন ৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা!

তাঁর কথায়, ‘‘১০ হাজার টাকায় চিমনিটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ৃ২১ এপ্রিল ওই ই-কমার্স সংস্থায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উৎসাহ দেখিয়ে অনেকে ফোন করেন। তাদের মধ্যে অভিষেককুমার দুবে নামে এক জন আমার বাসস্থানের লাইভ লোকেশন পাঠাতে বলে। এর পরে জানায়, সে নিশ্চিত ভাবে চিমনিটি কিনছে। ফলে আমি বিজ্ঞাপনটি তুলে নিতে পারি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, সব কথা আমায় ফাঁদে ফেলার জন্য বলা হয়েছিল। বিজ্ঞাপনটি তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই ব্যক্তির সঙ্গে আমার সব কথোপকথন মুছে যায়।’’

Advertisement

প্রতারিত ব্যক্তি জানান, প্রথমে একটি ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে তাঁর ফোন নম্বরে ১০ টাকা পাঠায় প্রতারক। এর পরে সে জানায়, ওয়ালেটের মাধ্যমে বেশি টাকা পাঠানো যাচ্ছে না। তাই সে প্রতারিত ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চায়। সেটি জানানোর পরেই একটি কিউআর কোড পাঠিয়ে সেটি স্ক্যান করতে বলে অভিষেককুমার দুবে। প্রতারিত ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘এক বারের জন্যও মনে হয়নি যে প্রতারিত হতে চলেছি। কিউআর কোড পাঠানোর পরে সেটা স্ক্যান করতেই আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা বার করে নেওয়া হয়।’’

ঘটনার পরেই দ্রুত বাঁশদ্রোণী থানায় ছোটেন প্রতারিত ব্যক্তি। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে সাইবার শাখার তদন্তকারীরা একটি ই-ওয়ালেট চিহ্নিত করেন। সেটি থেকে লেনদেন বন্ধ করে দিয়ে খোয়া যাওয়া টাকার মধ্যে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বেহাত হওয়া আটকে দিতে পারে পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই আপাতত প্রতারকদের ধরার চেষ্টা চলছে। লালবাজারের সাইবার শাখার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘যে কোনও টাকা একটি থেকে অন্য ই-ওয়ালেটে গেলে কিছুটা সময় ভার্চুয়াল মাধ্যমে থাকে। দ্রুত পুলিশকে জানাতে পারলে সেই টাকা বেরিয়ে যাওয়া আটকানো যায়। ফলে এমন প্রতারণা ঘটলেই দ্রুত পুলিশকে জানানো প্রয়োজন। থানা স্তর থেকেও দ্রুত সক্রিয় হতে হবে।’’

এর সঙ্গেই কিছু বিষয় অবশ্যই মনে রাখার কথা বলছেন সাইবার বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনলাইন বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে কাউকেই বিশ্বাস করা চলবে না। ই-কমার্স সাইটে ভুয়ো প্রোফাইল বানিয়ে প্রতারকরা যে অপেক্ষা করে রয়েছে, তা মনে রাখতে হবে। আর্থিক লেনদেনের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। অপরিচিত সূত্রে অনলাইন মাধ্যমে পাওয়া কোনও লিঙ্কে ক্লিক করা চলবে না। কোনও কিউআর কোড স্ক্যান করার আগেও সতর্ক হতে হবে। নিশ্চিত না হয়ে কোনও ওয়েবসাইটেই ব্যাঙ্ক বা এটিএম কার্ডের তথ্য আপলোড করা যাবে না। প্রতারকেরা অনেক সময়েই অক্ষরের অদলবদল করে পরিচিত ওয়েবসাইটের নাম নকল করে। সতর্ক হতে হবে সে ব্যাপারেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement