পুরনো সিম ব্লক করে নতুন সিম কার্ড নিয়ে অনলাইন ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে এক ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রতীকী ছবি।
প্রথমে মোবাইলের সিম কার্ড হারানোর ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের। এর পরেসেই অভিযোগপত্র দেখিয়ে পুরনো সিম ব্লক করে নতুন সিম কার্ড নিয়ে অনলাইন ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে এক ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া। একটি প্রতারণার মামলার তদন্তে নেমে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পরে টাকা হাতানোর এই কায়দা উঠে এসেছে তদন্তকারীদের সামনে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম দীপক শিকদার এবং জগদীশ সর্দার। তাদের বাড়ি দক্ষিণেশ্বরের আলমবাজারে।
সূত্রের খবর, গত মাসে পোস্তা থানা এলাকার এক ব্যবসায়ী একটি চেক দিয়েছিলেন তাঁর পাওনাদারকে। কিন্তু অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় চেকটি বাউন্স করে। তখন ওই ব্যবসায়ী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ঘটনার এক দিন আগে আরটিজিএস পদ্ধতিতে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যা গিয়েছে একাধিক অ্যাকাউন্টে। কিন্তু তিনি মোবাইলে মেসেজ পাননি। খোঁজ নিয়ে ওই ব্যক্তি জানতে পারেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্তমোবাইল নম্বরটি কাজ করছে না।এর পরেই তিনি পোস্তা থানার দ্বারস্থ হন। ঘটনার তদন্তভার নেয় লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ।
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ৭২ লক্ষ টাকার মধ্যে দীপকের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। সেই টাকা দিয়ে নৈহাটির একটি সোনার দোকান থেকে গয়না কেনা হয়েছে। পুলিশ ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দীপককে শনাক্ত করে। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করেন লালবাজারের ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখার তদন্তকারীরা। দীপককে জেরা করে খোঁজ মেলে জগদীশের। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা আন্তঃরাজ্য প্রতারণা-চক্রের সদস্য। কলকাতা,দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া-সহ একাধিক এলাকায় একই কায়দায় জালিয়াতি করেছে তারা।
ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, তারা প্রথমে ওই ব্যবসায়ীর ফোন নম্বরের খোঁজ করে। এর পরে সিম কার্ড হারানোর কথা বলে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের একটি থানায় জেনারেল ডায়েরি করে। তার পরে সেই অভিযাগপত্র দেখিয়ে একইনম্বরে নতুন সিম কার্ড তুলে নেয়। এ দিকে, আগের সিম কার্ড ব্লক হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীর ফোনটি আর কাজ করেনি। ইতিমধ্যে প্রতারকেরা অনলাইনে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের দখল নিয়ে নেয় এবং সেখানেথাকা টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলে। ফোন অকেজো থাকায় অভিযোগকারী কিছু জানতেই পারেননি।
এক তদন্তকারী অফিসার জানাচ্ছেন, প্রতারণার এই গোটা ঘটনার সঙ্গে ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশের যোগসাজশ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই চক্রে আরও অনেকে জড়িত। তাদের খোঁজ চলছে।