— প্রতীকী চিত্র।
সন্তানের অটিজ়ম ও অন্য প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে চলছে নানা থেরাপিও। বিশেষজ্ঞদের মতে, লড়াই শুরু হয় এর পরেই। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে রীতিমতো নাকানিচোবানি খেতে হয় অভিভাবকদের। অভিযোগ, পরিকাঠামোর অজুহাতে তাঁদের খালি হাতে ফেরানো হয়। স্কুলে ভর্তি নিলেও চলে ধারাবাহিক হয়রানি। অধিকাংশ স্কুলে থাকেন না বিশেষ শিক্ষকও। এই সমস্যার সমাধান কী? গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনে আয়োজিত দু’দিনের ‘অটিজ়ম কনভেনশন’-এ সেই প্রশ্নই তুললেন এক অভিভাবক। কেউ কেউ আবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের অধিকারের দাবিতে তাদের জন্য তৈরি বিশেষ আইন সম্পর্কে জানতে উৎসুক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য চালু সেই সব সরকারি প্রকল্প এবং আইন নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা চলল ‘অটিজ়ম কনভেনশন’-এ।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানদের জন্য লড়াইয়ের ময়দানে প্রধান হাতিয়ার, অর্থাৎ তাদের জন্য বিশেষ আইন নিয়ে সবিস্তারে জানতে শুক্র ও শনিবার, দু’দিনের এই কনভেনশনে এসেছিলেন প্রায় ৩৫০ জন অভিভাবক। চেন্নাই, মুম্বই, দিল্লি, গুরুগ্রাম, বাংলাদেশ থেকেও এসেছিলেন অনেকে। তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অভিভাবকদের একটি সর্বভারতীয় সংগঠন ‘পরিবার এনসিপিও’-র প্রধান পঙ্কজ মারু বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী আইন ২০১৬ আমাদের গীতা, কোরান, বাইবেল। আইনগুলি ভাল ভাবে জানলেই তো নিজেদের প্রাপ্য ছিনিয়ে নিতে পারব!’’ তিনি জানান, সাধারণের সুবিধার জন্য ওয়েবসাইটে বাংলা-সহ ভারতের নানা আঞ্চলিক ভাষায় তা অনূদিত আছে। এ ছাড়া সব ধরনের প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন রাজ্যে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এডিআইপি প্রকল্পে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধকতাযুক্তেরা সরকারি উদ্যোগে হুইলচেয়ার ও অন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র পেতে পারেন। ‘স্কলারশিপ’ প্রকল্পে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ারা পেতে পারে সরকারি সুবিধা। ‘নিরাময়’ স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা সরকারি সুবিধা। ব্যবসা বা অন্য কাজে এনএইচএফডিসি প্রকল্পে ঋণ পেতে পারেন তাঁরা। এ ছাড়া আছে রাজ্য সরকারের মানবিক, কন্যাশ্রী-সহ একাধিক ভাতা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদন করতে আধার কার্ড, জন্ম, জাতিগত, প্রতিবন্ধী (ইউডিআইডি) ও আর্থিক (এপিএল বা বিপিএল) শংসাপত্র থাকা দরকার। থাকতে হবে ব্যাঙ্কের পাসবই, ‘নিরাময়’ স্বাস্থ্য বিমার কার্ড এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আইনি অভিভাবকত্বের শংসাপত্র। একটি কর্মশালায় হাতেকলমে দেখিয়েও দেওয়া হয়, ঠিক কোথায়, কী ভাবে আবেদন করা যেতে পারে।
সমস্যার এখানেই শেষ নয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানকে বেশির ভাগ সময়েই স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন অভিভাবকেরা। স্কুল, শপিং মল, গণপরিবহণ-সহ নানা জায়গায় কী পরিমাণ হয়রানি, কটূক্তি ও নিগ্রহের শিকার হতে হয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি ও তাঁদের অভিভাবকদের, তা-ও ছোট নাটকের মাধ্যমে এই কনভেনশনে তুলে ধরেন বিশেষ শিক্ষক নীলাঞ্জনা রমবথু।
মুক্তির উপায় কী? রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস বলেন, ‘‘রাজ্যে স্কুল-সহ অন্য যে কোনও জায়গায় বাচ্চারা সমস্যায় পড়লে, নিগ্রহের ঘটনা ঘটলে আমাদের জানান। প্রয়োজনে অন্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা করব।’’ ন্যাশনাল ট্রাস্টের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অলোকা গুহ জানান, প্রতিবন্ধী আইন অনুযায়ী, কোনও খুদেকেই বঞ্চিত করা যায় না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে অভিযোগ জানাতে হবে। এমনকি সরকারি দফতর কাজ না করলেও সিপিজিআরএএমএস-এর (সেন্ট্রালাইজ়ড পাবলিক গ্রিভান্স রিড্রেস অ্যান্ড মনিটরিং সিস্টেম) মাধ্যমে অনলাইনেও অভিযোগ জানানো যায়।
তবে এই অসম লড়াই চালাতে গিয়ে বেশির ভাগ সময়েই অবহেলিত হয় প্রতিবন্ধকতার পিছনে থাকা মানুষটি। বেঙ্গালুরুর মনোবিদ শেখর শেষাদ্রি যেমন বলেন, ‘‘নানা শারীরিক সমস্যা ও সামাজিকপ্রতিবন্ধকতার জন্য অটিস্টিকদের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা সাধারণের তুলনায় অনেকটাই বেশি। অথচ সামাজিক নিয়মের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় অন্যায় ভাবে তাঁদেরই দোষারোপ করা হয়।’’ আশপাশের মানুষজনের সঙ্গে ‘ঠিক’ ব্যবহার না করতে পেরে মানসিক চাপে ভোগেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষটির পরিবারও। কী ভাবে নিজেদের সুস্থ রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায়, তার উপায় বাতলে দেন সমাবেশে হাজির মনোরোগ চিকিৎসকেরা।