বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজির চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের নামে শাসকদলের ওই দুই নেতা ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ তুলেছেন। প্রতীকী ছবি।
টাকা দিলেই মিলবে পছন্দের জায়গায় পোস্টিং!
এমনই দাবি করে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ এক সরকারি চিকিৎসক কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন অন্য এক সরকারি চিকিৎসক। এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি লিখেছেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সভাপতি ও সম্পাদক। যাঁদের এক জন তৃণমূলের বিধায়ক-চিকিৎসক নির্মল মাজি, অন্য জন সাংসদ-চিকিৎসক শান্তনু সেন।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজির চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের নামে শাসকদলের ওই দুই নেতা ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ তুলেছেন। এমনকি, ওই তরুণ চিকিৎসক-নেতা এই ভাবে টাকা তোলেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরে প্রশ্ন উঠেছে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বদলি নিয়ে যে বেনিয়মের অভিযোগ করেন বিরোধীরা, সেটাই কি মান্যতা পেল শাসকদলের দুই চিকিৎসক-নেতার এই অভিযোগে?
২০২১ সালে চিকিৎসক অবন্তিকা ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পরেই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বদলি ও পোস্টিংয়ের নেপথ্যে স্বজনপোষণ ও বেনিয়মের অভিযোগ বেশি মাত্রায় সামনে আসতে শুরু করেছিল। এ বারে বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-২ ব্লকের শক্তিপুর ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালের জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার (জিডিএমও) অনুপম মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, বছরখানেক আগে তাঁকে পছন্দ মতো জায়গায় বদলি করিয়ে দেওয়ার নামে বেশ কয়েক হাজার টাকা নিয়েছিলেন বিরূপাক্ষ। তিনি নিজেকে শাসকদলের এক চিকিৎসক-বিধায়ক এবং স্বাস্থ্য দফতরের উত্তরবঙ্গের এক আধিকারিকের বিশেষ ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করতেন বলেও অভিযোগ অনুপমের।
আইএমএ-কে পাঠানো অভিযোগপত্রে অনুপমের দাবি, দফায় দফায় টাকা নিলেও বদলির বিষয়ে কিছুই করেননি বিরূপাক্ষ। পরে অনুপম অন্য সহকর্মীদের থেকে জানতে পারেন, তাঁদের থেকেও এ ভাবে টাকা হাতিয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ওই চিকিৎসক। এর পরেই লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন অনুপম।
সম্প্রতি সেই চিঠিকে সংযোজিত করে অভিযোগপত্র রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে পাঠিয়েছেন শান্তনু ও নির্মল। স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের দাবি, বেশ কয়েক মাস আগেও নির্মলের সঙ্গে ওঠাবসা করতে দেখা যেত বিরূপাক্ষকে। যিনি নিজেকে ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর মুখপাত্র বলে দাবি করতেন। প্রশ্ন হল, যদি আগে থেকেই তাঁর নামে এমন বিভিন্ন অভিযোগ থাকে, তা হলে এত দিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
নির্মলের দাবি, “পিডিএ-তে মুখপাত্র বলে কোনও পদ নেই। ওটা স্বঘোষিত ছিল। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগএসেছিল, তখন থেকেই ওঁর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখা হয় না।” তাঁর আরও দাবি, “যে-ই হোন না কেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে কাউকেই রেয়াত করা হবে না। তাই পুলিশের সর্বোচ্চ মহলকে তদন্তের অনুরোধ করা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, গাড়িতে নীল বাতি ব্যবহারের অভিযোগে বিরূপাক্ষকে কয়েক মাস আগে আটকও করেছিল পুলিশ। শান্তনুর কথায়, “দেশের সর্ববৃহৎ চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ। সেখানে কোনও চিকিৎসক অভিযোগ জানালে তার বিহিত করাই আমাদের কর্তব্য। তাই তোলাবাজির অভিযোগ পেয়ে তা ডিজি-কে জানানো হয়েছে।” যদিও এই অভিযোগের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে দাবি করে বিরূপাক্ষ বলেন, “দুই নেতা এক হয়ে এই কাজ করেছেন। তবে টাকা নিয়েছিলাম, ধার হিসাবে। সেই ধার শোধও করেছি। তার পরেও এমন কেন হল, বুঝতে পারছি না।”