—প্রতীকী চিত্র।
ভরদুপুরে ব্যস্ত বিটি রোডের উপরে চলন্ত গাড়িতে বসে থাকা এক ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাল দুষ্কৃতীরা। এলোপাথাড়ি গুলি চললেও বেঁচে যান ওই ব্যবসায়ী। এর পরে থানায় পুলিশ আধিকারিকদের সামনে বসে ঘটনার বিবরণ দেওয়ার সময়েও তাঁর কাছে হুমকি ফোন আসে বলে অভিযোগ। তিহাড় জেলে বন্দি এক দুষ্কৃতী রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, ‘বেঁচে যাসনি, বাঁচিয়ে দিলাম। পরের বার আর সেটা হবে না!’
শনিবার দুপুরে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বেলঘরিয়ায়। ঘটনাস্থলে এসে ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘গাড়ি লক্ষ্য করে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বাইকে করে আসা দুই দুষ্কৃতী। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ যদিও ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডল ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গাড়ির বাঁ দিকে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালানোর পরে সামনের কাচে আরও তিন রাউন্ড গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। তবে, সেডান গাড়িটির কাচ বুলেটরোধী হওয়ায় সেটি ভেদ করতে পারেনি।
ব্যারাকপুরের বাসিন্দা অজয়ের আগরপাড়ায় গাড়ি ও বাইকের দু’টি শোরুম, বিটি রোডে একটি ব্যাঙ্কোয়েট রয়েছে। পাশাপাশি, প্রোমোটিংয়ের ব্যবসাও রয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই আগরপাড়ার শোরুমে ছিলেন অজয়। দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ কালো সেডান গাড়িটিতে চেপে তিনি ডোমজুড়ে নির্মীয়মাণ একটি স্কুলের কাজ দেখতে বেরোন। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাঁরই নিরাপত্তারক্ষী নিরঞ্জনকুমার সিংহ। তাঁরা জানাচ্ছেন, কামারহাটি পুরসভার সামনে রথতলা মোড় পার করে কয়েক পা এগোতেই আচমকা হামলা হয় গাড়ির উপরে।
অভিযোগ, হেলমেটে মুখ ঢাকা দুই দুষ্কৃতী একটি বাইকে চেপে ওই সেডান গাড়িটির বাঁ পাশে চলে আসে। অজয় বলেন, ‘‘আচমকা গুলির শব্দে চমকে যাই। চালক জানান, আমাদের গাড়িতে গুলি চালিয়েছে। দেখি, ওই দুষ্কৃতীরা বাইক নিয়ে গাড়ির সামনে চলে এসেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একটি পিস্তলের গুলি শেষ হতেই পিছনে বসা দুষ্কৃতী আরও একটি পিস্তল বার করে কাচ লক্ষ্য করে গুলি চালায়।’’ ভরদুপুরে রথতলার মতো জায়গায় প্রকাশ্যে এমন ঘটনায় হকচকিয়ে যান স্থানীয় দোকানদার ও পথচারীরা। মুহূর্তের মধ্যে পুরো কাণ্ড ঘটিয়ে ডানলপের দিকে তীব্র গতিতে বাইক নিয়ে পালায় ওই দুই দুষ্কৃতী। ব্যবসায়ীও আতঙ্কে গাড়ি ঘুরিয়ে রাস্তার উল্টো দিকে জগন্নাথ মন্দিরের সামনে চলে যান। গাড়ি থেকে নেমে অজয় মন্দিরে আশ্রয় নেন।
খবর পেয়ে বেলঘরিয়া, দক্ষিণেশ্বর, কামারহাটি থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে চলে আসে। গাড়িটি বেলঘরিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগে স্থানীয় এক দুষ্কৃতী দশ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল অজয়ের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু টাকা দিয়েছিলাম। আরও দেব, ঠিক করেছিলাম। তার আগেই হামলা চালাল।’’ তবে এ দিন ওই দুষ্কৃতী অজয়কে ফোন করেনি। যে ফোন করেছিল, সে টিটাগড়ের বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনে অন্যতম অভিযুক্ত।
পুলিশের অনুমান, আগরপাড়ার শোরুম থেকে অজয় বেরোনোর পর থেকেই তাঁকে অনুসরণ করছিল দুষ্কৃতীরা। আর, ওই ব্যবসায়ীকে মেরে ফেলার থেকেও এলাকায় আতঙ্ক তৈরিই মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে পুলিশের অনুমান। যাতে অন্য ব্যবসায়ীরাও ভীত-সন্ত্রস্ত থাকেন। তার জন্যই ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে অজয়ের উপরে হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দুষ্কৃতীদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।