ঝড়-বাজ নিয়ে ফেসবুকে প্রচার ছবিওয়ালাদের

‘কালবৈশাখী অ্যালার্ট! আগামী দু’তিন ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বজ্রপাত ও ঝড়ের আশঙ্কা। ইতিমধ্যে শক্তিক্ষয় না হলে এটি বেশ বড়সড় ঝড় হতে চলেছে’। 

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০৭
Share:

বজ্রগর্ভ: দেবর্ষি দত্তগুপ্তের তোলা এই ছবি দিয়ে ফেসবুকে বাজ নিয়ে সতর্ক করছে কেসিসি।

‘আজ সন্ধ্যায় দক্ষিণবঙ্গ এবং পশ্চিম দিকের জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়ের সতর্কতা রয়েছে। কলকাতায় অল্প বৃষ্টি হতে পারে’।

Advertisement

‘কালবৈশাখী অ্যালার্ট! আগামী দু’তিন ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বজ্রপাত ও ঝড়ের আশঙ্কা। ইতিমধ্যে শক্তিক্ষয় না হলে এটি বেশ বড়সড় ঝড় হতে চলেছে’।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ওয়েবসাইটের পূর্বাভাস নয়। কালবৈশাখীর মরসুমে প্রায় দিনই ফেসবুকে ঝড় নিয়ে এমন পোস্ট দিয়ে চলেছেন এ শহরের আট জন শখের ফটোগ্রাফার। যে দলের পোশাকি নাম ‘কলকাতা ক্লাউড চেজ়ার্স’ (কেসিসি)। হলিউডের ছবির কায়দায় ঝড়কে ধাওয়া করে ছবি তোলাই শুধু নয়, ঝড় ও বাজ সংক্রান্ত পূর্বাভাস সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে আর পাঁচ জনকে সাবধান করে দেওয়ার দায়িত্বটাও যাঁরা স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছেন নিজেদের কাঁধে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কেন? কেসিসি-র অন্যতম সদস্য দেবর্ষি দত্তগুপ্ত ওরফে ‘রোডরানার’ (দলে তাঁর নাম) বলছেন, ‘‘ছবি তুলতে গিয়ে দেখেছি, গ্রামের মানুষ ঝড়-বাজ সম্পর্কে অনেক বেশি জানেন। তাঁরা অনেকটাই সতর্ক। কিন্তু বজ্রপাত নিয়ে শহুরে লোকেদের সে ভাবে ধারণাই নেই। ফেসবুকে অ্যালার্ট দিলে যদি কিছু মানুষকে সতর্ক করা যায়, তাই এই উদ্যোগ।’’

কেসিসি-র কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী (ওরফে ‘জিউস’) এবং দলের একমাত্র মহিলা সদস্য চিরশ্রী চক্রবর্তী ওরফে ‘ফিনিক্স’ জানাচ্ছেন, আবহাওয়া দফতরের নিজস্ব ডপলার রেডার থেকে ঝড় সংক্রান্ত যে তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়, তা থেকেই ঝড়ের আগমনবার্তা বুঝতে পারেন তাঁরা। আগে তিন ঘণ্টায় এক বার আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য এলেও বর্তমানে সেই সময়সীমা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র পাঁচ মিনিটে। ফলে রাঁচী বা ঝাড়খণ্ড এলাকায় ঝড়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে তা সহজেই ধরা পড়ে ওই রেডারে। ঝড়ের গতিবেগ, অভিমুখ, মেঘে জলকণার পরিমাণ— ওয়েবসাইটে থাকে সব তথ্যই। সেই সঙ্গে রয়েছে মোবাইলে বিভিন্ন আবহাওয়া সংক্রান্ত অ্যাপও। কোনও কালবৈশাখীর মেঘ থেকে বজ্রপাত বা শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা-ও রঙের তফাৎ দিয়ে সহজেই বুঝে নেওয়া যায়। ফলে বাজ নিয়ে পূর্বাভাস করাটাও সহজ হয় কেসিসি-র পক্ষে। অ্যাপগুলিতে ‘প্রক্সিমিটি অ্যালার্টে’র ব্যবস্থা থাকায় কলকাতা থেকে ২৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাজ পড়লেই আরও বেশি করে ফেসবুকে অ্যালার্ট দিতে থাকে কেসিসি।

মেঘ ও ঝড়ের ছবি তোলার এই নেশাই প্রায় দশ বছর আগে মিলিয়ে দিয়েছিল শহরের আট ছবিওয়ালাকে। এর পরে বছর পাঁচেক আগে জন্ম কেসিসি-র। এখনও পরিবার আর কাজ সামলে সপ্তাহান্তে ঝড়ের খবর পেলেই গাড়ি-ওয়াকিটকি আর ক্যামেরা-ট্রাইপড নিয়ে বেরিয়ে পড়েন কেসিসি-র দিগন্ত গগৈ- ইন্দ্রনীল কর- জয়জিৎ মুখোপাধ্যায়- সুমনকুমার ঘোষেরা। আর তা করতে গিয়েই ধীরে ধীরে বজ্রপাত নিয়ে জেনেছেন অনেক কিছু। অস্ট্রেলিয়ার স্টর্ম চেজ়ার মাইক ও-নিল এবং আমেরিকার আবহবিজ্ঞানী ও স্টর্ম চেজ়ার রিড টিমারের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, বজ্রপাত থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন কী ভাবে। দেবর্ষির ব্যাখ্যা, ‘‘ওঁরাই শিখিয়েছেন, বাজের আলো আর আওয়াজের মধ্যে তিন সেকেন্ডের কম ফারাক থাকার অর্থ হল, এক মাইলের মধ্যে বাজ পড়ছে। এমন সময়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়াই শ্রেয়। তখন আমরা ছবি তোলা বাদ দিয়ে গাড়ির মধ্যে ঢুকে বসে থাকি। কারণ রবারের টায়ার থাকায় গাড়ি তুলনায় নিরাপদ।’’

গত বছরে বজ্রপাতে খাস কলকাতার বুকে মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। অফিসের ছাদে ট্রাইপড-সহ ছবি তুলতে গিয়ে বজ্রাঘাতে আহত হয়েছিলেন কেসিসি-র সদস্য, বছর ছত্রিশের অভিষেক সায়গল (থান্ডারম্যান)। প্রায় আধ ঘণ্টা ডান হাত এবং শরীরের নিম্নাংশে সাড় ছিল না! তার পর থেকেই আরও বেশি করে ফেসবুকে সতর্কতামূলক পোস্ট দিয়ে চলেছে কেসিসি। এ ছাড়াও শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলে কালবৈশাখী-বজ্রপাত এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন তাঁরা।

বাজের আকর্ষক ছবি তুলতে ইচ্ছুক যে সব ফটোগ্রাফার, তাঁদের জন্য কোনও পরামর্শ? দেবর্ষির সাফ জবাব, ‘‘বাজ নিয়ে পড়াশোনা না করে এর ছবি তোলার দরকারই নেই!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement