হিসেব না দিলে টাকা বন্ধ স্কুলের

শিক্ষা মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, বরাদ্দ অর্থ বিভিন্ন অজুহাতে অন্য খাতে খরচ করা হলে সেটা ধরা পড়ে ইউসি-তেই।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০২:৫৬
Share:

সর্বশিক্ষা মিশনের বিভিন্ন প্রকল্পের খাতে স্কুলগুলিকে টাকা দিয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। কিন্তু সেই টাকা কী ভাবে খরচ হয়েছে বা আদৌ খরচ হয়েছে কি না, তার শংসাপত্র (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট বা ইউসি) সম্পূর্ণ ভাবে দেখাতে পারেননি কলকাতার প্রায় ৭০ শতাংশ স্কুলের কর্তৃপক্ষ। এ বার কড়া চিঠি পাঠিয়ে বিগত দু’টি অর্থবর্ষের ইউসি চেয়ে পাঠাল কলকাতার স্কুলশিক্ষা দফতরের সর্বশিক্ষা মিশন বিভাগ। ইউসি না দেওয়া হলে প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা বন্ধ করার পাশাপাশি কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দফতরের এক কর্তা জানান, শহরে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে এ রকম স্কুলের সংখ্যা দু’হাজারের একটু বেশি। তার মধ্যে ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের খরচ হওয়া টাকার পুরো হিসেব দফতরের কাছে জমা দেয়নি ৭০ শতাংশ স্কুল। অর্থাৎ পাঁচ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হলে তিন কোটি টাকার হিসেব জমা পড়েছে। বাকি দু’কোটি টাকা খরচের শংসাপত্র দেয়নি স্কুলগুলি। টাকা দেওয়া হয়েছিল সিভিল ও নন-সিভিল খাতে। সিভিলের মধ্যে পড়ে অতিরিক্ত ক্লাসঘর তৈরি, শৌচাগার তৈরি ও মেরামতি, পানীয় জলের ব্যবস্থা ইত্যাদি। নন-সিভিল বলতে বোঝায় স্কুলের সার্বিক মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ-সহ অন্য কিছু ক্ষেত্র। এই সমস্ত খাতে দফতর যে টাকা দেয়, তার ব্যবহারিক শংসাপত্র বা ইউসি পেশ করলে তবেই পরবর্তী খাতে টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ইউসি-র হিসেবে গোলমাল থাকলে বরাদ্দ বন্ধ হতে পারে। শুধু তাই-ই নয়, শংসাপত্র ঠিক ভাবে জমা পড়লে খরচের হিসেব স্বচ্ছ থাকে। দুর্নীতি রুখতে গেলেও ইউসি বাধ্যতামূলক। সেখানে খাস কলকাতার অধিকাংশ স্কুলই কেন ইউসি দিল না, সেটাও ভাবাচ্ছে দফতরকে।

শিক্ষা মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, বরাদ্দ অর্থ বিভিন্ন অজুহাতে অন্য খাতে খরচ করা হলে সেটা ধরা পড়ে ইউসি-তেই। তাই শৌচাগার সংস্কারের জন্য বরাদ্দ অর্থ যদি অন্যত্র ব্যয় করা হয়, তা সহজেই ধরে ফেলা যাবে। প্রসঙ্গত, স্কুলের বিভিন্ন প্রকল্পের অ্যাকাউন্টের যে খাতা আছে সেটাও দফতরে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

Advertisement

বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানান, ইউসি তলব করা মানেই এটা বলা যায় না যে কোনও স্কুলে দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, বরাদ্দ অর্থ খরচের ক্ষেত্রে কিছু গাফিলতি রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, নির্দিষ্ট বিধি মেনে ইউসি দেওয়া হয়নি। কোটি কোটি টাকার হিসেবের ক্ষেত্রে এই গাফিলতি কাম্য নয় বলে মত দফতরের।

কলকাতার সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সুশান্ত পাণ্ডা বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক বিষয়ে স্বচ্ছতা রাখার জন্য ইউসি বাধ্যতামূলক। স্কুলগুলির উচিত ছিল সময়মতো ইউসি দিয়ে দেওয়া। তাহলে এই পদক্ষেপ নিতে হত না।’’

প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন পরে কেন ইউসি তলব? স্কুলগুলি দু’টি অর্থবর্ষের খরচের পুরো হিসেব দেয়নি, তা কি জানত না দফতর?

সর্বশিক্ষা মিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এর আগেও আমরা খরচের হিসেব দাখিল করতে বলেছিলাম। তখন অনেক স্কুল পুরোপুরি হিসেব দেয়নি। তাই এ বার কড়া চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টিতেই আমাদের নজর রয়েছে।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ইউসি তো অবশ্যই দেওয়া উচিত। কিন্তু গত কয়েক বছরে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ না হওয়ায় স্কুলগুলি সেই কাজ দ্রুত করে উঠতে পারেনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement