প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শুধু কন্টেনমেন্ট জ়োনেই নয়, গোটা এলাকা জুড়ে কড়া পদক্ষেপ করতে আটঘাট বেঁধে নামতে চলেছে শহর কলকাতা লাগোয়া পুরসভাগুলি।
কলকাতা লাগোয়া চারটি পুর এলাকা— মহেশতলা, বজবজ, রাজপুর-সোনারপুর এবং বারুইপুরে সম্প্রতি লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। ওই সব পুরসভার আধিকারিকদের অভিযোগ, লকডাউন শিথিল হতেই করোনা সংক্রমণের বিধিনিষেধ মানছেন না বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। অনেকেই নিয়মিত কলকাতায় যাতায়াত শুরু করেছেন। কলকাতা এবং জেলা থেকেও কর্মসূত্রে এই এলাকাগুলিতে আসছেন মানুষজন। মহেশতলা পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘লকডাউন শুরুর পরে প্রথম দিকে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। মৃত্যুর ঘটনা কয়েকটি। কিন্তু লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকে সংক্রমণের প্রকোপে রাশ টানা যাচ্ছে না।’’
বজবজ পুরসভার বিদায়ী ভাইস-চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এখন যেখানে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই এলাকাটাই কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হচ্ছে। কিন্তু মূল সমস্যা আরও গভীরে। কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে শুরু করেছেন। মাস্ক না-পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দূরত্ব-বিধি মানার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করছেন না।’’
মহেশতলা পুরসভার এক কর্তা সুকান্ত বেরা বলেন, ‘‘শুধু কন্টেনমেন্ট জ়োন করে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। এত বলা সত্ত্বেও যাঁরা সচেতন হচ্ছেন না, কঠোর আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে তাঁদের বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
মহেশতলা থানা সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসনের নির্দেশিকা অনুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে কন্টেনমেন্ট জ়োন শনাক্ত করার পাশাপাশি স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাইরে বেরোলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। মেনে চলতে হবে ন্যূনতম দূরত্ব-বিধি। বিশেষত বাজার-দোকানে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মুখে মাস্ক না-থাকলে তাঁদের জরিমানা করা হবে।
পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, নিয়ম না-মানার সঙ্গে যোগ হয়েছে আর একটি সমস্যা। করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে অনেকেই গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা বাজারে যাচ্ছেন। এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। সম্প্রতি মহেশতলা পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক মহিলার করোনা ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের ফ্ল্যাটেই একটি ঘরে গৃহ-পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। পাশের ঘরে ছিল তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই গাড়িচালক ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওই মহিলা।
এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘ওই মহিলাকে সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। আর ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা করার পরে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান পল্লব দাস বলেন, ‘‘মানুষকে সচেতন করতে করতে আমরা ক্লান্ত। এলাকার বাজার-দোকান এবং রাস্তায় কড়া
নজরদারি শুরু হয়েছে। বিনা মাস্কে কাউকে রাস্তায় দেখা গেলে আইনি পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বাজারগুলি জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে।’’ বারুইপুরের পুর চেয়ারম্যান শক্তি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘লকডাউন শিথিল হতেই মানুষ বাঁধনছাড়া হয়ে পড়েছেন। কারও মধ্যে ভয় চোখে পড়ছে না। বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে। তাতে কাজ
না-হলে আমরা কঠোর আইনি পথে যেতে বাধ্য হব।’’