Delhi Assembly Election 2025

হারানো জমির সন্ধানে কেজরীর ময়দানে রাহুল

রাহুল গান্ধীর এই ‘ফ্রন্ট ফুট’-এ গিয়ে আম আদমি পার্টির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে প্রচারে নামার সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে, কংগ্রেস কি ইন্ডিয়া জোট নিয়ে আর ভাবছে না?

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:২৬
Share:

(বাঁ দিকে) অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং রাহুল গান্ধী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

এ বার অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সঙ্গে কার্যত সম্মুখসমরে নামছেন রাহুল গান্ধী। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে পদযাত্রা করবেন। কংগ্রেস কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ দীক্ষিতকে প্রার্থী করেছে। সন্দীপের হয়ে প্রচারের পরে দিল্লির জঙ্গপুরা ও কালকাজি বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীদের হয়ে প্রচারেও রাহুল পদযাত্রা করবেন। এই দুই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দিল্লির প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অতিশী ভোটে লড়ছেন।

Advertisement

রাহুল গান্ধীর এই ‘ফ্রন্ট ফুট’-এ গিয়ে আম আদমি পার্টির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে প্রচারে নামার সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে, কংগ্রেস কি ইন্ডিয়া জোট নিয়ে আর ভাবছে না?

রাহুলের ঘনিষ্ঠ শিবিরের পাল্টা যুক্তি, কংগ্রেস এত দিন ইন্ডিয়া-র শরিক দল হিসেবে আম আদমি পার্টির সম্পর্কে ‘নরম মনোভাব’ নিয়েছে। দিল্লির কংগ্রেস নেতা তথা জাতীয় কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ অজয় মাকেন অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে ‘দেশবিরোধী’ প্রমাণ করতে সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সে সময় ইন্ডিয়া-র শরিক দলের নেতারা কংগ্রেস নেতৃত্বকে এ হেন আক্রমণে না যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফ থেকে অজয় মাকেনকে বারণ করা হয়। এর ফলে ‘অপমানিত’ মাকেন গত সপ্তাহে দিল্লির সীলমপুরে রাহুল গান্ধীর প্রথম প্রচারসভায় গরহাজির ছিলেন। কিন্তু এর পরে দেখা যায়, অখিলেশ যাদব, শরদ পওয়ার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ইন্ডিয়া-র শরিকরা আম আদমি পার্টিকেই সমর্থন করছেন। তাঁরাই ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তা হলে রাহুল গান্ধী কেন কংগ্রেসের হয়ে কেজরীওয়ালের কেন্দ্রে প্রচার করবেন না?

Advertisement

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অখিলেশ যাদব ব্যাখ্যা দিয়েছেন, দিল্লিতে আম আদমি পার্টিই বিজেপিকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। তাঁরা কেজরীওয়ালকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইন্ডিয়া জোট তৈরির সময়ই যে যেখানে শক্তিশালী, তাকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কংগ্রেসের সন্দীপ দীক্ষিত আজ মন্তব্য করেছেন, ‘‘আসলে সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল চিন্তায় রয়েছে, তারা আপ-কে সমর্থনের পরেও কংগ্রেসের রথ থামছে না। কংগ্রেস দিল্লিতে ভাল ফল করলে উত্তরপ্রদেশে কী হবে, তা নিয়ে সমাজবাদী পার্টির চিন্তা রয়েছে। তৃণমূলেরও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে একই চিন্তা রয়েছে হয়তো। আপ ভাল ফল করলে অন্যান্য শরিক দলের কোনও চিন্তা নেই। কংগ্রেস ভাল ফলকরলে বাকি সকলের নিজের রাজ্য নিয়ে চিন্তা হয়!’’

আম আদমি পার্টির চিন্তা হল, কংগ্রেস যদি আগের তুলনায় বেশি ভোট পায়, তা হলে বিজেপি লাভবান হবে। কারণ কংগ্রেস আম আদমি পার্টির সংখ্যালঘু, ওবিসি, গরিব ভোটে ভাগ বসাতে পারে। কংগ্রেসের একাংশ আবার মনে করছেন, দিল্লি ভোটে কংগ্রেস মূলত কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে সরব হলে বিরোধী ভোটে ভাগ বসাবে। সে ক্ষেত্রে দিল্লিতে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির ক্ষতি। আখেরে আম আদমি পার্টিরই লাভ। তা ছাড়া ভোটের পরেও প্রয়োজনে কংগ্রেস আপ-কে সমর্থন করতে পারে।

কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, ২০১৩ সালে শীলা দীক্ষিতের সরকার পতনের সময়ও কংগ্রেস দিল্লিতে ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এখন তা ৫ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। যে কোনও মূল্যে কংগ্রেসের হারানো ভোট পুনরুদ্ধার করাই আসল কাজ। রাহুল গান্ধীকে নয়াদিল্লি, কালকাজি, জঙ্গপুরার তিনটি ‘ভিভিআইপি’ বিধানসভা কেন্দ্রের বাইরেও আরও ১৫ থেকে ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কংগ্রেসের এক নেতার যুক্তি, ‘‘রাহুল নিজে কেজরীওয়ালের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সন্দীপকেও কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে আক্রমণ থেকে বিরত করা হয়নি। মাকেনের ক্ষোভ মেটাতে তাঁকে সামনে রেখে কংগ্রেস মুখপাত্ররা শনিবার নতুন সদর দফতরে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement