KMC

KMC: পুরসভায় কাটেনি পেনশন-জট, হাতে এল মাত্র এক মাসের টাকা, বাড়ছে ক্ষোভ

পুরসভার অর্থ দফতর সূত্রের খবর, কোভিড অতিমারির জন্য পুরসভার বিভিন্ন দফতরের রাজস্ব বাবদ আয় তলানিতে ঠেকেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২২ ০৭:০৩
Share:

ফাইল চিত্র।

পেনশন নিয়ে সমস্যা আর মিটছে না। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বর থেকে অবসর নেওয়া ৩৪০ জন পুরকর্মী কেবল ফেব্রুয়ারি মাসের পেনশনের টাকা পেয়েছেন মার্চ মাসে। অবসরকালীন গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশনের মোটা টাকাও তাঁদের দেওয়া হয়নি। পেনশনের বকেয়া টাকা কবে মিলবে, তা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা।

Advertisement

অবসরের পরেও পেনশন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় পুর ভবনে একাধিক বার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বামকর্মী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। ‘জয়েন্ট ফোরাম ট্রেড ইউনিয়ন’-এর আহ্বায়ক রতন ভট্টাচার্যের হুঁশিয়ারি, ‘‘বার বার বিক্ষোভ দেখিয়েও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীরা যে ভাবে পেনশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা শীঘ্রই বড়সড় আন্দোলনে নামব।’’

গত জানুয়ারিতেই পুরসভার পেনশন দফতরে ঝোলানো একটি নোটিস ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। ওই নোটিসে লেখা ছিল, আর্থিক সঙ্কটের কারণে সেপ্টেম্বরের পর থেকে অবসর নেওয়া পুরকর্মীদের পেনশন আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। পরে অবশ্য মেয়র ফিরহাদ হাকিম দাবি করেছিলেন, ‘‘ওই নোটিস পুরসভার তরফে জারি করা হয়নি। কেউ খবর করার জন্য ছবি তুলতে নোটিস টাঙিয়েছে। পুর কমিশনারকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করানো হবে।’’ তবে অবসরের সময়ে প্রাপ্য কমিউটেশনের মোটা টাকা যে আপাতত দেওয়া যাবে না, তা দিনকয়েক আগেই স্পষ্ট জানিয়েছিলেন মেয়র। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কমিউটেশন ছাড়া পেনশনের বাকি পুরো টাকাই দেওয়া হচ্ছে। সকলেরই পেনশন চালু হয়েছে।’’

Advertisement

কিন্তু মেয়র সকলের পেনশন চালু হয়ে গিয়েছে বলে আশ্বাস দিলেও পুরসভার পেনশন দফতর সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বর থেকে অবসর নেওয়া ২৪০ জনের পেনশন এখনও চালুই হয়নি। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওঁদের পেনশন সামনের মাস থেকে চালু হয়ে যাবে। মার্চের টাকাটা এপ্রিলে পাবেন।’’ কিন্তু সেপ্টেম্বরের পরে অবসর নেওয়া ৩৪০ জন জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসের পেনশনের টাকা এখনও পাননি। ওই ৩৪০ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ফেব্রুয়ারির পেনশনের টাকা মার্চে হাতে পেয়েছেন। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, অবসর নেওয়ার পরেই থোক টাকা পেয়ে বাড়ি তৈরির ধার মেটাব। কিন্তু গ্র্যাচুইটি, কমিউটেশন— কিছুই পেলাম না। চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছি।’’ আর এক অবসরপ্রাপ্তের খেদ, ‘‘আমার স্ত্রীর একটা বড়সড় অস্ত্রোপচার হবে। এই সময়ে কমিউটেশনের টাকাটা খুব দরকার ছিল। ফেব্রুয়ারির টাকাটা পেয়েছি। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পেনশনের টাকা এখনও পেলাম না। জানি না, কবে পাব!’’

পুরসভার অর্থ দফতর সূত্রের খবর, কোভিড অতিমারির জন্য পুরসভার বিভিন্ন দফতরের রাজস্ব বাবদ আয় তলানিতে ঠেকেছিল। সেই কারণেই বর্তমানে কোষাগারের এমন হাল। তবে অর্থ দফতরের এক আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘ধীরে ধীরে পুরসভার আয় ফের বাড়ছে। এটা ভাল লক্ষণ। এই ভাবে চলতে থাকলে পেনশন সংক্রান্ত সমস্যা মিটে যাবে।’’ ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের টাকা পেতে যে দেরি হচ্ছে, সেটা সত্যিই দুঃখের। তবে ওঁরা প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত হবেন না। সমস্ত বকেয়াই ধীরে ধীরে পেয়ে যাবেন।’’

পুরসভার পেনশন দফতরে এখন নিত্যদিন ভিড় লেগেই রয়েছে। কবে বকেয়া হাতে পাবেন, তা জানতে সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্তেরা। বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘পুরসভার উচিত আগে অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া। এটা তাঁদের অধিকারের টাকা। এই টাকা দিতে দেরি করা অন্যায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement