প্রতীকী চিত্র।
চোর সন্দেহেই পিটিয়ে খুন করা হয়েছে এন্টালির বাসিন্দা, মহম্মদ সোনু নামে বছর ষোলোর কিশোরকে। গত শুক্রবারের ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করার পরে বুধবার এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার সময়ে অভিযুক্তেরা নেশাগ্রস্ত ছিল বলেও পুলিশ সূত্রের খবর। আজ, বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে তোলা হবে। লালবাজার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ১৪ বছরের এক নাবালককেও আটক করা হয়েছে। আপাতত তাকে হোমে পাঠানো হয়েছে। পরে তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে তোলা হবে।
গত শুক্রবার ভোরে এন্টালির দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল সোনুকে। আশপাশের কয়েক জন তা দেখে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান এন্টালি থানার এক পুলিশকর্মী। অটোয় করে ওই কিশোরকে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময়েই মারা যায় সে। দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডেরই বাসিন্দা মহম্মদ ওয়াসিম আক্রম খান ওরফে আমন নামে এক তরুণের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ।
ওই কিশোর যেখানে পড়ে ছিল, তদন্তে নেমে সেখান থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে একটি পাড়ার কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে রক্তের ছোপ দেখতে পাওয়া যায়। লালবাজারের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সায়েন্টিফিক উইংয়ের সদস্যেরা ঘটনাস্থলে যান। ওই পাড়ার কয়েকটি বাড়ি থেকে একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন তাঁরা। তার মধ্যে একটি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার রাত ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ এক কিশোর হেঁটে যাচ্ছে। পরমুহূর্তেই তাকে ছুটে ফিরে আসতে দেখা যায়। তার একটি হাত গলার কাছে চেপে ধরা ছিল। ফুটেজে ওই কিশোরের পিছনে ধাওয়া করতে দেখা যায় কয়েক জনকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ জে সি বসু রোড, বেলেঘাটা মেন রোড এবং দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের এমনই একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এক নাবালক-সহ পাঁচ জনকে চিহ্নিত করা হয়। এর পরে শুরু হয় তাদের উপরে নজরদারি। মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয় বেলেঘাটা মেন রোডের বাসিন্দা রাহুল যাদব এবং আশিস সোনি নামে আঠারো বছর বয়সি দু’জনকে। তাদের জেরা করে ওই রাতেই ধরা হয় সুধীর কুমার (২২) নামে তৃতীয় জনকে। যদিও এই ঘটনায় জড়িত আরও এক জন এখনও ফেরার।
কী ঘটেছিল শুক্রবার রাতে? পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের ওই এলাকায় প্রায়ই চুরির অভিযোগ ওঠে। ঘটনার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিল সোনু। তার পরিবারের দাবি, সাইকেল ভ্যানে আনাজ নিয়ে শিয়ালদহের বাজারে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত সে। রাত ২টো নাগাদ দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে সোনু ও তার বন্ধুদের দেখে ‘চোর-চোর’ চিৎকার শুরু করেন কয়েক জন। সেই সময়ে ওই এলাকাতেই ছিল সুধীর, রাহুলেরা। তারাই সোনুকে ধরে মারতে শুরু করে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, সম্পূর্ণ উত্তেজনার বশে একটি ভাঙা টিউব দিয়ে মারা হয় সোনুকে। তার গলায় গুরুতর আঘাত লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় সোনু ছুটে পালানোর চেষ্টা করেও পারেনি। পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে একটি জায়গায় তার দেহ মেলে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ধৃতদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেকেই মাদকাসক্ত। ওই রাতে তারা কী উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল, তা-ও দেখা হচ্ছে।’’