মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তিরিশ বছর আগে একেবারে সামনে থেকে সবটা দেখেছিলেন তাঁরা। যুব কংগ্রেসের তৎকালীন সভানেত্রীর উপরে পুলিশকে বেপরোয়াভাবে লাঠি চালাতে দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন নিজে পুলিশকর্মী হয়েও। এক জনের নির্দেশে আর এক জন গাদা বন্দুক তাক করেছিলেন উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তার দিকে। সেই অপরাধে চাকরি গিয়েছিল দু’জনেরই। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে এক জন চাকরি ও বকেয়া পাওনা ফিরে পেলেও আর এক জন এখনও দিনমজুর!
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই টি-বোর্ড মোড়ে কর্তব্যরত সেই দুই পুলিশকর্মী, সিরাজুল হকমণ্ডল ও নির্মল বিশ্বাসকে এ বার ডেকে পাঠিয়ে কথা বললেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী তথা বর্তমানে তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ দু’জনেই নবান্নে পৌঁছে যান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের প্রায় আধ ঘণ্টা কথা হয় বলে সূত্রের খবর। সেখানে তিরিশ বছরআগের ঘটনা বিবৃত করেন দু’জনেই। পরে ফোনে নির্মল ও সিরাজুল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী অন্তত এক বার ডেকে কথা বলুন, এটাই চেয়েছিলাম। এত বছর পরে হলেও, তা আজ ঘটল।মুখ্যমন্ত্রী হয়েও উনি কিছু ভোলেননি। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।’’
ঘটনার দিন টি-বোর্ডে এসে বসেছিলেন মমতা। আচমকাই কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এসে লাঠি চালানোর নির্দেশ দিলে তাঁর সঙ্গে থাকা বাহিনীএলোপাথাড়ি লাঠি চালাতে থাকে মমতার উপরে। সেই সময়ে কনস্টেবল পদে কর্মরত সিরাজুল বলেন, ‘‘সব স্মৃতি আজও টাটকা। নির্মল স্যর বললেন, ‘এত মারছে, সব দেখেও চুপ করে আছিস! কিছু কর।’কোনও কিছু না ভেবে উচ্চপদস্থ কর্তার দিকে বন্দুক তাক করতেই তিনি এলাকা ছাড়েন।’’ এই ঘটনায় প্রথমে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের এসআইনির্মলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে তিনি নিজের চাকরি ফিরে পান। নির্মল বলেন, ‘‘সিরাজুল গরিব মানুষ। আইনি লড়াইচালাতে পারেননি। সঙ্গে এসে ওঁর চাকরির জন্য আমিও আবেদন জানালাম।’’
তবে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আর কী আলোচনা হল, বা তিনি কী বললেন, তা নিয়ে কিছু বলতে নারাজ দু’জনেই। সিরাজুলের কথায়, ‘‘নিশ্চয়ইমুখ্যমন্ত্রী ভাল কিছু করবেন, সেই আশা ছিল, আছে।’’ আর নির্মল বলছেন, ‘‘যা বলার, তা হয়তো মুখ্যমন্ত্রীই বলবেন।’’