আলিপুর সংশোধনাগার।
মাস নয়েক আগেই বন্দিশূন্য হয়েছে জাজেস কোর্ট রোডের আলিপুর জেল। এ বার সেখানেই গড়ে উঠতে চলেছে দু’টি সংগ্রহশালা। আপাতত তেমনই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। নবান্ন সূত্রের খবর, সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রথম ধাপ হিসেবে ইতিমধ্যেই কারা দফতরকে চিঠি দিয়ে জেলের জমি পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, হেরিটেজ কমিশনের প্রস্তাব মতো আলিপুর জেলে দু’টি সংগ্রহশালা করতে চলেছে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সংগ্রহশালার পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শুরু করেছে রাজ্য পূর্ত দফতর। বন্দিশূন্য হলেও আলিপুর জেলে ছাপাখানা (প্রেস) চালু রয়েছে। প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আসা বন্দিরা কাজও করেন সেখানে। কিন্তু জেলের অন্য অংশ পরিষ্কার হয় না। তাই জেলের অন্য চত্বরে গজিয়ে ওঠা আগাছা-গুল্ম পরিষ্কারের জন্য সপ্তাহ দেড়েক আগে কারা দফতরের সেক্রেটারিয়েটে চিঠি দিয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। সেই চিঠির কথা জানানো হয়েছে কারা দফতরের ডাইরেক্টরেটকে। এর পরেই জেলের ভিতরের আগাছা পরিষ্কারের জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। কারণ, কিছু দিনের মধ্যে আলিপুর জেল পরিদর্শনে যেতে পারেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্যেরা।
তবে দু’টি সংগ্রহশালায় কী কী থাকবে, তা পরবর্তীতে স্থির করা হবে বলে রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে। সংগ্রহশালা গড়ে ওঠার পরে বাকি অংশে কী করা হবে, তা এখনও রাজ্য প্রশাসন স্থির করেনি বলে সূত্রের খবর।
১৯০৬ সালে তৈরি হওয়া অনেক ইতিহাসের সাক্ষী রয়েছে আদিগঙ্গার পাড়ের ২১ ফুট পাঁচিল ঘেরা লাল রঙের বাড়িটিতে। সেখানে ব্রিটিশ জমানায় সময় কেটেছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, জওহরলাল নেহরু, বিধানচন্দ্র রায়দের। রাজ্য কারা দফতরের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সুভাষচন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশদের ব্যবহৃত কুঠুরি ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে।
আলিপুর জেলের অন্দরে রয়েছে নেহরু ভবন। রয়েছে দোতলার নেতাজি ভবন। আর ভবনের সঙ্গেই রয়েছে চিত্তরঞ্জন দাশ, বিধানচন্দ্র রায়ের ব্যবহৃত কুঠুরি। ওই কুঠুরিগুলির সামনে নেতাজি, দেশবন্ধু, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মূর্তি নামের ফলক-সহ বসেছে।
আলিপুর জেলের ফাঁসিকাঠেই গলা দিয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী অনন্তহরি মিত্র। সেখানে প্রমোদরঞ্জন চৌধুরীরও ফাঁসি হয়। এখানেই ব্রিটিশ সরকার ফাঁসি দেয় দীনেশ গুপ্তকে। স্বাধীনতা সংগ্রামী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, দীনেশ মজুমদারেরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় এখানে। ফাঁসি মঞ্চ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ব্যবহৃত কুঠুরিগুলি হেরিটেজ সাইট হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে কারা দফতরের ওয়েবসাইটে। পাশাপাশি, একই মর্যাদা পেয়েছে জেলের ছাপাখানাও।