Cyber Crime

অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে ২৫০ কোটির প্রতারণার জাল

এখনও পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে মজফ্‌ফরপুর থেকে, সাত জন কলকাতার একটি হোটেল থেকে এবং ছ’জন দক্ষিণ কলকাতার একটি অফিস থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৫২
Share:

এখনও পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। — প্রতীকী চিত্র।

প্রায় সওয়া এক কোটি টাকার একটি প্রতারণার ঘটনার তদন্তে নেমে ২৫০ কোটি টাকার আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণা চক্রের হদিস পেলেন বিধাননগর সিটি পুলিশ এবং রাজ্য সাইবার শাখার গোয়েন্দারা। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে মজফ্‌ফরপুর থেকে, সাত জন কলকাতার একটি হোটেল থেকে এবং ছ’জন দক্ষিণ কলকাতার একটি অফিস থেকে। ১৭ জনের মধ্যে রয়েছে ওই চক্রের তিন পান্ডাও। তাদের নাম অভিষেক বনসল, মায়াঙ্ক চৌধুরী এবং অমিত জিন্দল।

Advertisement

এদের মধ্যে পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অভিষেক শিলিগুড়ির বাসিন্দা। সে-ই এই চক্রের মাথা। মায়াঙ্কের বাড়ি গুজরাতে। অমিত ফরিদাবাদের বাসিন্দা। সকলেই বর্তমানে দুবাই প্রবাসী। পুলিশের দাবি, আন্তর্জাতিক এই সাইবার প্রতারণা চক্রটি দুবাইয়ে বসে ভারত জুড়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে (মিউল) জালিয়াতির কারবার চালাত।

রাজ্য পুলিশের সাইবার শাখার এডিজি হরিকিশোর কুসুমাকার জানান, ধৃতেরা জেরায় দাবি করেছে, ভারতের ২৯টি রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এই প্রতারণার জাল। প্রায় আড়াই হাজার অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়েছিল তারা। সেগুলির মধ্যে চিহ্নিত করা গিয়েছে ৭০০-র বেশি অ্যাকাউন্ট। সব মিলিয়ে প্রতারণার অঙ্ক ২৪৫ কোটি টাকা। এই চক্রের বিরুদ্ধে দেড় হাজারেরও বেশি (১৫৩০টি) অভিযোগ রয়েছে ‘ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং’ পোর্টালে। চক্রটির সঙ্গে শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়-সহ একাধিক দেশের যোগসূত্র মিলেছে।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানান, এই কারবারে ব্যাঙ্ককর্মীদের একাংশেরও যোগসাজশ পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যেই নাগেরবাজারের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীরা প্রতারণায় যুক্ত বলে উঠে এসেছে। ভুয়ো নথি জমা নিয়ে বিপুল পরিমাণ ‘প্রি-অ্যাক্টিভেটেড’ সিম কার্ড সরবরাহ করার জন্য একাধিক মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাও তদন্তের আওতায় রয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত জুন মাসে সল্টলেকের বাসিন্দা এক চিকিৎসক অভিযোগ করেন, তিনি সমাজমাধ্যমে শেয়ার সংক্রান্ত আলোচনা করার সময়ে তাঁর সঙ্গে কয়েক জনের আলাপ হয়। তারা তাঁকে একটি ওয়টস্যাপ গ্রুপে যুক্ত করে। সেখান থেকে ওই চিকিৎসককে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা বিনিয়োগ করতে বলা হয়। আশ্বাস দেওয়া হয়, তিনি কয়েক গুণ বেশি টাকা ফেরত পাবেন। পুলিশের দাবি, ওই চিকিৎসক বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে প্রায় সওয়া কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু পরে সেই টাকা তুলতে পারেননি।

পুলিশ জানিয়েছে, যে সব অ্যাকাউন্টে ওই চিকিৎসক বিনিয়োগ করেছিলেন, সবগুলিই ছিল ভুয়ো। তদন্তে নেমে বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার নাম পায় পুলিশ। প্রথমে পার্ক স্ট্রিটে প্রতারকদের একটি অফিসের খোঁজ মেলে। সেখান থেকে ধরা হয় সাত জনকে। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ভুয়ো অ্যাকাউন্টের জন্য নথি নিয়ে এসে রাখত। এর পরে ব্যাঙ্কের যোগসাজশে সেই অ্যাকাউন্ট খোলা হত।

এক পুলিশকর্তা জানান, ভুয়ো নথি দেখিয়ে কলকাতা পুরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স বার করে তা দিয়ে সংস্থা খুলে সেখানে টাকা সরাত অভিযুক্তেরা। পুলিশের দাবি, আধার এবং প্যান কার্ড দিয়ে মিউল অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়া হত। ওই নথি ব্যবহার করে তোলা হত মোবাইলের সিম কার্ড। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমন প্রচুর সিম কার্ড কিনে সেগুলি দুবাইয়ে পাঠিয়ে দিত প্রতারকেরা। সেখানে ওয়টস্যাপে সক্রিয় হয়ে উঠত ওই নম্বর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement