আবেশ হত্যা রহস্যের জট কাটাতে ফরেন্সিকে বন্ধুদের ১৫ মোবাইল

জট কাটেনি রহস্যের। আবেশ দাশগুপ্তের অপমৃত্যুর পিছনে কোন ‘সত্যি’ লুকিয়ে আছে, তা জানতে গোয়েন্দাদের বড় ভরসা এখন মুঠোফোন। শনিবারের ঘটনার পরে আবেশের সঙ্গীরা নিজেদের মধ্যে মোবাইলে কী কী বার্তা চালাচালি করছিল জানার তাগিদে তাই ১৫টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করল লালবাজার। কোনও বার্তা মুছে দেওয়া হয়ে থাকলে তা উদ্ধার করার লক্ষ্যে মোবাইলগুলিকে ফরেন্সিকে পাঠানো হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

সানি পার্কে তদন্তকারী দল। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

জট কাটেনি রহস্যের। আবেশ দাশগুপ্তের অপমৃত্যুর পিছনে কোন ‘সত্যি’ লুকিয়ে আছে, তা জানতে গোয়েন্দাদের বড় ভরসা এখন মুঠোফোন। শনিবারের ঘটনার পরে আবেশের সঙ্গীরা নিজেদের মধ্যে মোবাইলে কী কী বার্তা চালাচালি করছিল জানার তাগিদে তাই ১৫টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করল লালবাজার। কোনও বার্তা মুছে দেওয়া হয়ে থাকলে তা উদ্ধার করার লক্ষ্যে মোবাইলগুলিকে ফরেন্সিকে পাঠানো হচ্ছে।

Advertisement

আবেশ-রহস্য এই মুহূর্তে মূলত ঘুরপাক খাচ্ছে একটি প্রশ্ন ঘিরে— তার বগলের ধমনী ফুটো হয়ে গিয়েছিল কি স্রেফ পিছলে গিয়ে পড়ে? নাকি বাইরের কোনও আঘাতে? রহস্য উদ্ঘাটনে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। আবেশের সঙ্গীদের মোবাইল-বার্তা এ আতসকাচের তলায় আসছে কেন?

গোয়েন্দারা বলছেন, এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেলে কিশোর-কিশোরীরা অন্য বন্ধুদের বিষয়টা না জানিয়ে থাকতে পারবে না। আর সে কাজে মোবাইলই অন্যতম মাধ্যম। বাজেয়াপ্ত প্রতিটি মোবাইল ঘেঁটে সেই সব বার্তা খুঁজে বার করতে চাইছেন তাঁরা, যাতে আসল ঘটনার কিছু আঁচ পাওয়া যায়। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘মেসেজগুলোর মধ্যে মিসিং লিঙ্ক পেতেই পারি।’’

Advertisement

এ দিকে মোবাইল-বার্তার সঙ্গে আবেশের সংশ্লিষ্ট বন্ধুদের বয়ান মিলিয়ে দেখে ইতিমধ্যে কিছু খটকা লেগেছে তদন্তকারীদের। ওই দিনের পার্টিতে কে কখন এসেছে, বেরিয়েছে, আবেশের আঘাত লাগার সময়ে কে কোথায় ছিল, বন্ধুদের সেই সংক্রান্ত বক্তব্যেও কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। জট খুলতে বুধবার লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয় আট জন কিশোর-কিশোরীকে, যারা শনিবার সানি পার্কের আবাসনের পার্টিতে হাজির ছিল। অভিভাবকদেরও ডাকা হয়। কথাবার্তার মাধ্যমে তদন্তকারীরা জানতে চেয়েছেন, রক্তাক্ত বন্ধুকে ফেলে রেখে তাদের অনেকে সে দিন কেন চলে গিয়েছিল? তার পিছনে কি অভিভাবকদের নির্দেশ ছিল?

পাশাপাশি লালবাজার থেকে বিশেষ তদন্তদলের কয়েক জন এ দিন সানি পার্কের আবাসনে যান। ঘটনাস্থলের সাইট ম্যাপ জোগাড় করেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানার চেষ্টা করেন, সে দিন ওই ছেলে-মেয়েদের কারা কখন ঢুকেছিল, বেরিয়েছিল। আবাসনের সিকিওরিটি গার্ডদের ডিউটি রোস্টারও সংগ্রহ করেন। আবাসনের আবাসিক সংগঠনের সভাপতি কিশোর ভিমানী, তিন রক্ষী ও এক লিফ্‌টম্যানকে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়। রক্ষী-আবাসিকদের নজর এড়িয়ে এত বড় ঘটনা কী ভাবে ঘটে গেল, সে সম্পর্কে কিশোরবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে লালবাজারের খবর।

একই সঙ্গে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আবেশের সব বন্ধুর মোবাইল থেকে সব তথ্য তাঁরা পাননি। অনুমান, অনেকে ইতিমধ্যে মোবাইল থেকে কিছু হোয়াটসঅ্যাপ-বার্তা, এসএমএস ইত্যাদি মুছে দিয়েছে। সেগুলো যাতে উদ্ধার (রিট্রিভ) করা যায়, সে জন্যই বাজেয়াপ্ত ১৫টি মোবাইল ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। মুছে দেওয়া বার্তা কি ফিরে পাওয়া সম্ভব? সাইবার-ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা: এসএমএস এক জনের মোবাইল থেকে অন্যের মোবাইলে গিয়েছে। এক জন ‘ডিলিট’ করলেও অন্য জনের মোবাইলে তা মিলতে পারে। তা ছাড়া ফরেন্সিক ল্যাবে উদ্ধারের উপায় রয়েছে।

সাইবার অপরাধ দমনে অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারেরাও বলছেন, এ জন্য নির্দিষ্ট সফ্‌টওয়্যারের সাহায্য নেওয়া যায়। তবে একটাই সমস্যা— মোছা এসএমএস কখনও মেমরির ‘ব্যাড সেক্টরে’ জমা হয়, কখনও মুছে দেওয়া মেমরির উপরে অন্য মেসেজ ‘ওভ্যারল্যাপ’ করে যায়। ‘‘তখন কিন্তু রিট্রিভ করা অসম্ভব।’’— মন্তব্য এক অফিসারের। সাইবার-বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরীর বক্তব্য, হোয়্যাটসঅ্যাপ মেসেজ মুছে দিলেও অনেক সময় তার ‘ব্যাকআপ’ থাকে হোয়্যাটসঅ্যাপ ক্লাউডে। সেখান থেকে উদ্ধার করা যেতে পারে।

সেই আশায় বুক বাঁধছে লালবাজার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement