Ultadanga Library

ডিঙি বাহনের সাক্ষী একশো বছরের পাঠাগার

Advertisement

আর্যভট্ট খান 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২৪
Share:

মগ্ন: উল্টোডাঙা লাইব্রেরির আড্ডায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

স্বাধীনতার আগে সে অন্য উল্টোডাঙা। দু’দিক খালে ঘেরা। কাছেই বিশাল ভেড়ি। খালের ওপারেই শ্যামবাজার, বাগবাজার, হাটখোলা, মানিকতলা। ছোট ছোট কাঠের সেতু দিয়ে দু'পারে যাতায়াত হত। শহরের উত্তর-পূর্বে দ্বীপের মতো এই জায়গার জনবসতি ছিল খুব কম।

Advertisement

প্রায় বিচ্ছিন্ন এই বসতি এলাকার কিছু মানুষ ১৯২০ সালে একটি পাঠাগার তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। বাগবাজার, শ্যামবাজারের মতোই নিয়মিত সংস্কৃতি চর্চা শুরু করাও ছিল এটি তৈরির অন্য উদ্দেশ্য।

টিনের চালের ছোট্ট ঘরে ১৯২০ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয় উল্টোডাঙা লাইব্রেরি। বাগবাজার, শ্যামবাজারের মতো আলো তখনও সে ভাবে অন্য পাড়ে পৌঁছয়নি। উল্টোডাঙা এলাকায় ছিল ছোট বাজার, ধানকল, করাতকল, দেশলাই কারখানা, আলকাতরার গুদাম আর জমিদারদের বাগানবাড়ি। উল্টোডাঙা খালের সঙ্গে যোগ ছিল বিদ্যাধরী নদীর। খালপথে সেই নদী হয়ে পণ্য পৌঁছে যেত বাংলাদেশে।

Advertisement

জনশ্রুতি আছে, এলাকার নামকরণে সেই জলপথ পরিবহণের ছাপ স্পষ্ট। পণ্য পরিবহণের কাজে উল্টোডাঙা খালপাড়ে যে সব ডিঙি এসে ভিড়ত, রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে সেগুলিকে উল্টে রেখে আলকাতরা মাখানো হত। অনেকের মতে, উল্টো করে ডিঙি রাখায় এলাকার নাম উল্টোডাঙা।

সেই সব ইতিহাসের সাক্ষী উল্টোডাঙা লাইব্রেরি চলতি বছরের জানুয়ারিতে একশো বছরে পা দিয়েছে। পাঠাগারের বর্তমান সেক্রেটারি সমীর দত্ত বলেন, “১৯৪৮ সালে শহরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে লাইব্রেরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে ভয়ঙ্কর বন্যায় লাইব্রেরির ঘর ভেঙে পড়ে। তা সত্ত্বেও মানুষের প্রচেষ্টায় লাইব্রেরি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।”

সমীরবাবু জানান, পুরনো লেখা ও পাঠাগারের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই নির্জন এলাকার পাঠাগারে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আনাগোনা লেগেই থাকত। কারণ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে লাইব্রেরির রিডিং রুমে হ্যারিকেনের আলোয় পরবর্তী কৌশল ঠিক করা ছিল তাঁদের পক্ষে অনেক সুবিধাজনক।

স্বাধীনতার পরবর্তী কালে বাড়তে থাকে উল্টোডাঙার গুরুত্ব। বাড়তে থাকে পাঠাগারের সদস্য। ষাট, সত্তর, আটের দশকে উল্টোডাঙা লাইব্রেরিকে ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানও হত। বর্তমান সদস্য পার্থ দে জানান, ২০০৬ সালে শিশু বিভাগ উদ্বোধন করেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। ডিজিটাল যুগে পাঠাগারে আসা পাঠকের সংখ্যা কমেছে অনেক। হাল ছাড়েননি উল্টোডাঙা লাইব্রেরির বর্তমান সদস্য মিন্টু কুণ্ডু, কানাইলাল রায়, গোবিন্দ ভট্টাচার্য, আলোকচন্দন চট্টোপাধ্যায়রা। তাঁদের উদ্যোগে শুরু হয়েছে অনলাইন মেম্বারশিপ।

তাঁদের মতে, ছোট এই পাঠাগারের সঙ্গে রয়েছে আঞ্চলিক ইতিহাস। রয়েছে এলাকার মানুষের ভালবাসা। তাই একে বাঁচিয়ে তো রাখতেই হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement