অঘটন: দ্রুত গতিতে এই গাড়িই ধাক্কা মারে এক ব্যক্তিকে। (বাঁ দিকে)। গ্রেফতার করা হয়েছে গাড়ির চালক, হুকা বারের মালিক-সহ বেশ কয়েক জনকে (ডান দিকে)। শুক্রবার, কসবায়।ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য ও নিজস্ব চিত্র
ভোরের কলকাতায় বেপরোয়া বিএমডব্লিউ গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। আহত হয়েছেন এক পুলিশকর্মী। শুক্রবার পাঁচটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে কসবার রাজডাঙা মেন রোডে একটি হুকা বারের কাছে। ঘটনায় বিএমডব্লিউ গাড়িটির চালক এবং তার দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হুকা বার খুলে রাখার অভিযোগে সেটির মালিককেও গ্রেফতার করেছে কসবা থানা।
উল্লেখ্য, বছর পাঁচেক আগে রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের মহড়া চলাকালীন সেখানে একটি গাড়ি বেপরোয়া গতিতে ঢুকে পিষে দিয়েছিল বায়ুসেনার এক অফিসারকে। একই ভাবে দু’বছর আগে, ২০১৯ সালে শহরের একটি বিরিয়ানি চেন-রেস্তরাঁর মালিকের ছেলে পিষে দিয়েছিল রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা দুই বাংলাদেশি যুবককে। কসবার এ দিনের ঘটনা ওই দুই দুর্ঘটনার স্মৃতিকে উস্কে দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিনের ঘটনায় ধৃতদের নাম রাজদীপ শর্মা, অভিষেক দাস, চন্দ্র পাল এবং রোহিত রাজপুত। গাড়িটি চালাচ্ছিল রাজদীপ। শহরে তার রেস্তরাঁর চেন-ব্যবসা রয়েছে। রাজদীপের সঙ্গে গাড়িতে ছিল অভিষেক এবং চন্দ্র। রোহিত ওই হুকা বারের মালিক। সেখানেই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এসেছিল অভিযুক্তেরা। দুর্ঘটনায় যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁর নাম তপন দে (৫০)। বাড়ি তিলজলায়। ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র কুড়ানোর কাজ করতেন তিনি। আহত পুলিশকর্মীর নাম উদয় বিশ্বাস। তিনি গোয়েন্দা বিভাগের কনস্টেবল। তাঁকে বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় বিএমডব্লিউ গাড়িটি-সহ মোট চারটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঠিক কী ঘটেছিল? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ধৃত তিন জন এবং তাদের এক বন্ধু বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজডাঙা মেন রোডে ওই হুকা বারে এসেছিল। খাওয়াদাওয়ার পরে তাদের সঙ্গে টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বচসা বাধে আর একটি দলে থাকা এক ব্যবসায়ীর। ভোর চারটে নাগাদ হুকা বারের নিরাপত্তারক্ষীরা সবাইকে বার করে দেন। অভিযোগ, বাইরে বেরিয়ে উভয় পক্ষ ফের বচসায় জড়ায়। সেই সময়ে ওই এলাকায় ডিউটি করছিলেন উদয়বাবু। মত্ত অবস্থায় কয়েক জন যুবক একটি হুকা বারের সামনে গোলমাল করছে, এই খবর পেয়ে সেখানে যান তিনি।
পুলিশ জানায়, গোলমালের মধ্যেই রাজদীপ তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে পালায়। কিছু ক্ষণ পরে ফিরে এসে ওই ব্যবসায়ীর অডি গাড়িতে ধাক্কা মারে। গাড়িটির পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন উদয়বাবু। তিনি ধাক্কায় জখম হন। পুলিশ জানিয়েছে, এর পর বিএমডব্লিউ গাড়িটি দ্রুত গতিতে পালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তপনবাবুকে ধাক্কা মারে। তার পরে ধাক্কা মারে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়িকে।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনই বিএমডব্লিউ গাড়িটিকে আটকান। চালককে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, আহত তপনবাবুকে বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। চালক রাজদীপ-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
পাশাপাশি এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, অতিমারি পরিস্থিতিতে যেখানে সব রেস্তরাঁ ও পানশালা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার, সেখানে এই হুকা বারটি খোলা থাকে কী ভাবে? স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই হুকা বারটি রোজই গভীর রাত থেকে পরের দিন ভোরবেলা পর্যন্ত খোলা থাকে। সেখানে ভিড়ও হয় ভালই। লালবাজার জানিয়েছে, পুলিশের নজর এড়িয়ে কী ভাবে ওই হুকা বারটি খোলা রাখা হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পুলিশের ভূমিকাও। একই সঙ্গে হুকা বারের মালিক রোহিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।