প্রতীকী চিত্র
রোগের উপসর্গের নাম রূপকথার গল্প থেকে নেওয়া। তার ফলশ্রুতি অবশ্য রূপকথার মতো নয়। গল্পে রাজকুমারী র্যাপুনজেলের দীর্ঘ চুল বেয়ে প্রাসাদে উঠতেন তাঁর প্রেমিক। আর বাস্তবে ‘র্যাপুনজেল সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়ে বর্ধমানের কিশোরী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) চিকিৎসাধীন। রবিবার অস্ত্রোপচার করে তার পেট থেকে এক কেজি চুল বার করেছেন ওই হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকদের মতে, চুল খাওয়ার বদভ্যাস এক ধরনের মানসিক রোগ। সচেতনতার অভাবে রোগী-মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। মানসিক রোগের অভিধানে চুল ছেঁড়ার প্রবণতাকে ‘ট্রাইকোটিল্লোম্যানিয়া’ বলা হয়। আর চুল খেয়ে ফেলার রোগের নাম ‘ট্রিকোবেজোর’। সেই চুল পেটের মধ্যে জমতে জমতে দীর্ঘাকৃতি হলে বলা হয়, ‘র্যাপুনজেল সিন্ড্রোম’। গত তিন বছর ধরে ওই উপসর্গের শিকার বর্ধমানের কিশোরী। বছর পাঁচেক আগে কসবার ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর পেট থেকে আড়াই কেজি চুল বার করেছিলেন শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
বর্ধমানের ওই ছাত্রীর কাকু অনুপ কুন্ডু জানান, তাঁর ভাইঝি যে চুল খায়, জানতেনই না তার বাবা-মা। মাসখানেক আগে কিশোরীর পেটে ব্যথা শুরু হয়। যা খেত, সব বমি হয়ে যেত। স্থানীয় চিকিৎসক সিটি স্ক্যান এবং এন্ডোস্কোপি করতে বলেন। তাতেই দেখা যায়, পাকস্থলী জুড়ে রয়েছে চুলের গোছা। অবিলম্বে কিশোরীকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক। সেই মতো রবিবার কিশোরী ও তার পরিজনেরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আসেন। রোগীর রিপোর্ট দেখে তখনই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন জেনারেল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক আরএমও সুমন সাহা। তাঁকে সেই কাজে সাহায্য করেন চিকিৎসক প্রেমাংশু চট্টোপাধ্যায়, জাহিরুল আলম এবং গোলাম কিবরিয়া।
সুমনবাবু বলেন, ‘‘রোগীর পেটের সামনের অংশ ফোলা ছিল। পেটের মধ্যে থাকা চুল পাকস্থলীর বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ছিল। তাতে খাদ্যনালী আটকে সমস্যা দেখা দেয়। সারা বিশ্বে এ ধরনের রোগের নজির খুব বেশি নেই। কিশোরী আপাতত সুস্থ। পুরো সুস্থ হলে তার মানসিক রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন।’’