আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ফাইল ছবি
কলকাতায় আসাদউদ্দিন ওয়াইসি-কে সভা করার অনুমিত দিল না কলকাতা পুলিশ। অনুমতি না মেলায় শেষ পর্যন্ত সভা বাতিল করার কথা ঘোষণা করা হল সংগঠনের পক্ষ থেকে। বৃহস্পতিবার কলকাতা বন্দর এলাকার কারবালার পিঙ্ক স্কোয়্যারে জনসভা করার কথা ছিল অল ইন্ডিয়া মজলিশে ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধানের। কিন্তু সভার ২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত পুলিশের অনুমতি পায়নি এআইএমআইএম। বুধবার রাতে সংগঠনের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, অনুমতি না মেলায় আপাতত কর্মসূচি বাতিল করা হল।
পুলিশের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলীয় নেতৃত্বের। কারণ, তাঁরা বহু আগেই আসাদাউদ্দিনের কলকাতায় জনসভা করার ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের কাছে আইন মোতাবেক সভা করার আবেদনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু জনসভার আগের দিন রাত পর্যন্ত পুলিশি অনুমতি না মেলায় শেষ পর্যন্ত সভা বাতিল করলেন তাঁরা। এআইএমআইএম-এর পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জামিরুল হাসান বলেছিলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যে আসাদউদ্দিন সাহেবের বাংলায় আগমনকে ভয় পাচ্ছেন, তা এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট। আমরা শেষ পর্যন্ত আইনগত ভাবে সভা করার অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব। কিন্তু যদি অনুমতি না পাওয়ায় যায়, তা হলে আমরা পুলিশি অনুমতি ছাড়াই জনসভা করব।’’ তবে সেই সিদ্ধান্ত পরে পাল্টায়।
প্রসঙ্গত, গত বছর লোকসভা ভোটে গিয়ে কোচবিহারে ওয়াইসির বড় বড় হোর্ডিং দেখে এক রাজনৈতিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রমণ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘হায়দরাবাদের একটা রাজনৈতিক দল আছে। যারা মুখে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার জন্য বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে। আসলে ওরা বিজেপি-র বি টিম। ওদের একটা ভোটও দেবেন না।’’
পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন আসাদউদ্দিনও। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে তো বাংলায় আমরা প্রার্থী দিইনি। তা হলে বিজেপি ১৮টি আসন জিতল কী ভাবে?’’ সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দেবেন তাঁরা।
গত ১০ নভেম্বর বিহার বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বিহারে বেশ ভাল ফল করে কয়েকটি আসন জিতেছে আসাদউদ্দিনের দল। সেই সময়ই বাংলায় প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা করে এ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন ওয়াইসি। সেই মতো গত ৩ জানুয়ারি ফুরফরা শরিফে এসে আব্বাস সিদ্দিকির নেতৃত্বের উপর তাঁর আস্থাজ্ঞাপন করে জোটের কথা ঘোষণা করে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২১ জানুয়ারি রাজনৈতিক দল ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ ঘোষণার পর বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়াই করার দিকে এগোচ্ছেন আব্বাস। সেই পর্যায়েই মেটিয়াবুরুজে রাজনৈতিক জনসভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল মিম।
ওয়াইসিকে জনসভা করার অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের মত, এআইএমআইএম হিন্দি ও উর্দুভাষী সংখ্যালঘুদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। যে মেটিয়াবুরুজে ওয়াইসি-র দল জনসভা করার আবেদন জানিয়েছিল তা-ও পুরোপুরি হিন্দি ও উর্দুভাষী সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোট থেকেই সংখ্যালঘু এলাকাগুলি তৃণমূলের গড় হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও তৃণমূলের ভরাডুবিতেও সমস্ত সংখ্যালঘু এলাকায় শাসকদলের প্রার্থীরা বিপুল ব্যবধানে এগিয়েছিলেন। মমতার নেতৃত্বাধীন দল সেই ভোটবাক্সে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে ভাগ বসাতে দিতে নারাজ। সেই ভাবনা থেকেই ওয়াইসি-কে সভার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে কলকাতা পুলিশ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।