TMC

রায়দিঘিতে আর নেই রায় দেবশ্রী, তৃণমূলে ‘অপমান’ সয়ে রায় নিতে চান অন্য কোনও কেন্দ্রে

বিজেপি সম্মানের সঙ্গে কোথাও প্রার্থী করতে চাইলে তিনি রাজি হবেন? দেবশ্রী বলছেন, ‘‘যদি নিয়ে কোনও কথা হয় না। তবে প্রস্তাব এলে ভেবে দেখব।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৩৯
Share:

দলের একাংশকে নিয়েই অসন্তোষ দেবশ্রী রায়ের। ফাইল চিত্র

বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলেও রায়দিঘি কেন্দ্রে আর নয়। বুধবার সাফ জানালেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি আসনের দু’বারের বিধায়ক অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। বুধবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বলেন, ‘‘আর রায়দিঘি থেকে ভোটে দাঁড়াতে চাইছি না। এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। খুব তাড়াতাড়ি দলকে সেটা জানিয়ে দেব।’’ কেন এমন সিদ্ধান্ত? দেবশ্রী বলেন, ‘‘আমি অনেক অপমানিত, অনেক বিরক্ত হয়েছি। টোটো কেলেঙ্কারি নিয়ে অনেক অপবাদ সহ্য করতে হয়েছে। দলেরই একাংশ সেটা করছে। এমনকি, আমাকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দলের লোকেরাই দিচ্ছে। তারা চায় না আমি রায়দিঘি থেকে প্রার্থী হই। বিধায়ক হই।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই অভিযোগ আগেই জানিয়েছেন দাবি করে দেবশ্রী বলেন, ‘‘টোটো কেলেঙ্কারির নামে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। সে সব কথা নেত্রীকে জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনও কাজ না হওয়াতেই রায়দিঘি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তবে কি অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হবেন? দেবশ্রী বলেন, ‘‘এ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। সেটা দল সিদ্ধান্ত নেবে।’’ রায়দিঘির পরিবর্তে তাঁর কোনও পছন্দের কেন্দ্র রয়েছে? দেবশ্রীর জবাব, ‘‘তেমন করে ভেবে দেখিনি। দলে আলোচনা হলে তখন ভাবব।’’

প্রসঙ্গত দেবশ্রীর বিরুদ্ধে টোটো বিলি সংক্রান্ত আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সেই বিতর্ক সামনে নিয়ে এসেছেন অধুনা বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়। রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী এলাকায় কোনও কাজ করেননি বলে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে একযোগে আক্রমণ শানিয়েছেন শোভন। রায়দিঘিতে গিয়ে সেখানকার মানুষের কাছে দেবশ্রীকে জেতানোয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন। সেই পরিস্থিতিতে রায়দিঘি কেন্দ্র ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কি শোভন-বৈশাখীদের ভয়ে? দেবশ্রী বলেন, ‘‘রায়দিঘির মানুষের সঙ্গে আমার অনেক গভীর যোগাযোগ। নির্বাচন জেতার জন্য ওঁরা (শোভন-বৈশাখী) কিছুই নন আমার কাছে। আমি বিজেপি-র বিরোধিতার জন্য নয়, নিজের দলের ভিতরের কিছু মানুষের কাছে অপমানিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ দেবশ্রী আরও বলেন, ‘‘এই তো আমার কেন্দ্রের অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হল। ওঁরা হাতজোড় করে বলছিলেন, আমি যেন আবার ওখান থেকেই ভোটে দাঁড়াই। কিন্তু আমি আর চাইছি না। আমি পারছিও না। রায়দিঘির মানুষ আমায় ভালবাসলেও অপমানটা আর নিতে পারছি না। আমি একজন শিল্পী। আমি সম্মানের সঙ্গে বড় হয়েছি। ফলে কেউ অপমান করলে সেটা মেনে নিতে অসুবিধা হয়।’’

Advertisement

তৃণমূলে থাকাকালীন শোভনের সঙ্গে দেবশ্রীর ভাল সম্পর্ক ছিল। বস্তুত, ২০১৬ সালে দেবশ্রীকে রায়দিঘিতে ফের টিকিট দেওয়ার বিষয়ে দলে দ্বিমত থাকলেও শোভন তাঁকে জেতানোর দায়িত্ব নেন। এর পরে ঘটনাচক্রে, শোভন-বৈশাখী যেদিন বিজেপি-তে যোগদানের জন্য দিল্লিতে তাদের সদর দফতরে যান, সেদিন সেখানে অকস্মাৎ দেখা যায় দেবশ্রীকে। যার ফলে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন শোভন-বৈশাখী। তাঁরা এমনকি, দলে যোগ দিতে অসম্মত হয়েছিলেন। দেবশ্রী বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন না বোঝানোর পরেই তাঁরা যোগদান করতে রাজি হন। যদিও তার পরেও দেবশ্রী বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এখন দলে ‘অপমানিত’ দেবশ্রীর কি আবার বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? বিজেপি সম্মানের সঙ্গে কোথাও প্রার্থী করতে চাইলে তিনি রাজি হবেন? দেবশ্রী বলছেন, ‘‘যদি নিয়ে কোনও কথা হয় না। তবে প্রস্তাব এলে ভেবে দেখব।’’

সম্প্রতি রাজ্য-রাজনীতির আলোচনায় ফের উঠে এসেছেন দেবশ্রী। গত ২১ জানুয়ারি রায়দিঘিতে বিজেপি-র এক জনসভায় গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। সেখানে দু’জনেই দেবশ্রীর কড়া সমালোচনা করেন। যে সূত্রে আলিপুর আদালতে দু’জনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেছেন দেবশ্রী। এ বার তাঁর অভিযোগ তৃণমূলেরই একাংশের বিরুদ্ধে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement