তিনি গৌরবের পাশে বলে ফেসবুকে জানিয়েছেন রূপা। ফাইল চিত্র
৮৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে বিজেপি-র ঘরোয়া যুদ্ধ চরমে। গত পুরভোটে জেতা এই ওয়ার্ডের প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই জল্পনা ছিল। সম্প্রতি একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিস্তা দাস বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। এর পরে মনে করা হয়েছিল, ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী হবেন তিস্তার স্বামী গৌরব বিশ্বাস। কিন্তু শেষবেলায় দেখা যায়, রাসবিহারী বিধানসভা এলাকার ওই ওয়ার্ড থেকে বিজেপি প্রার্থী করেছে রাজর্ষী লাহিড়ীকে। এর পরেই ক্ষোভ তৈরি হয় বিজেপি-র অন্দরে। শেষে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ওই ওয়ার্ডে মনোনয়ন জমা দিয়ে দিয়েছেন গৌরব। বিজেপি সূত্রে খবর, গৌরবের পিছনে রয়েছে দলেরই সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সমর্থন। রূপার সমর্থনের কথা মেনে নিয়েছেন গৌরবও। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘রূপাদি এই ওয়ার্ডের সব কিছু সবিস্তার জানেন। দলের একাংশ এই ওয়ার্ড তৃণমূলের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সেটা রূপাদি হতে দিতে চান না। তাই আমার হয়ে তিনি প্রচারে আসবেন বলেও জানিয়েছেন।’’
রূপার সঙ্গে বুধবার একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনে সাড়া দেননি। রাজ্যসভার অধিবেশনে যোগ দিতে রূপা এখন দিল্লিতে। তবে কলকাতা পুরভোট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব তিনি। তবে সে ক্ষেত্রেও রূপা যে দলের চাপে রয়েছেন তার প্রমাণও মিলেছে। ফেসবুকে একাধিক পোস্ট করেও তিনি পরে তা সরিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, নেতৃত্বের নির্দেশেই তা করেছেন রূপা। তবে সেই সব পোস্ট রূপা সরিয়ে নিলেও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তার স্ক্রিনশট। তাতে দেখা যাচ্ছে, রূপা স্পষ্ট ভাবেই ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে গৌরবের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিস্তার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রূপার লেখায় উঠে এসেছে টাকা-পয়সা নিয়ে প্রার্থিতালিকা তৈরির অভিযোগও।
রূপা যে গৌরবের পক্ষ নিতে চান, সেটা স্পষ্ট হয় মঙ্গলবারই। গৌরব মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে রূপাকে নিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব বৈঠকে বসেন। ভার্চুয়াল সেই বৈঠকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ছিলেন কলকাতা পুরভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য নেতারা। বৈঠকে যোগ দেওয়া এক নেতার কথায় জানা যায়, রূপা ওই বৈঠক ছেড়ে আচমকাই বেরিয়ে যান। সেই সঙ্গে ‘ভাটের বৈঠকে ডাকেন কেন’ মন্তব্যও করেন তিনি।
দলের চাপেই কি পোস্ট সরিয়ে নিয়েছেন রূপা!
রাতেই রূপা ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘আজ আমার বিশ্বাস সত্যিতে পরিণত হল যে, তিস্তার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং খুন। দুঃখিত রাজ্য বিজেপি। আমি আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে গৌরবের পাশেই থাকব।’ এখানেই শেষ নয়। বুধবার দু’টি পোস্ট করেও পরে তা সরিয়ে দেন রূপা। তার একটিতে ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী রাজর্ষীকে ‘ইডিয়ট’ বলে উল্লেখ করেন। অন্যটিতে রাজর্ষীর সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন সময়ে হওয়া কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে বিজেপি-র প্রার্থিতালিকা তৈরির ক্ষেত্রে টাকা-পয়সার খেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন টিভি ধারাবাহিক মহাভারতে দ্রৌপদী চরিত্রে অভিনয় করা রূপা।
রূপার এই কাণ্ড নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তবে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই গৌরবের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন দলের কয়েক জন নেতা। তিনি যাতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন তার জন্য বোঝানোর পালা শুরু হয়েছে।