আচমকা কমে গেল মেয়রের নিরাপত্তা বলয়। তা নিয়ে জল্পনাও নানা রকম রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। —ফাইল চিত্র।
নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়া হল কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। এত দিন জেড প্লাস ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পেতেন শোভন। আচমকাই তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন থেকে জেড প্লাস ক্যাটিগরির পরিবর্তে জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সে কথা অস্বীকার করেছেন।
রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পান। তিনি পান জেড প্লাস ক্যাটিগরির নিরাপত্তা। শোভন চট্টোপাধ্যায়ও কিন্তু বেশ অস্বাভাবিক ভাবে অনেক সিনিয়র মন্ত্রীকে টপকে জেড প্লাস ক্যাটিগরি পাচ্ছিলেন। বুধবার সকালেও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কনভয়ে জেড প্লাস সুরক্ষা বলয় বহাল ছিল বলে একটি মহলের দাবি। দুপুরের দিকে তা প্রত্যহৃত হয়েছে বলে খবর।
বিধানসভায় নিজের ঘরে বসে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়ার খবর ভিত্তিহীন। এত দিন যে যেমন নিরাপত্তা পেতেন, এখনও তাঁরা সকলে তেমনই পাচ্ছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। কারও নিরাপত্তা বাড়ানো বা কমানো হয়নি— দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা জেড প্লাস থেকে জেড ক্যাটিগরিতে নামানো হয়েছে। আর দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিমের নিরাপত্তা ওয়াই ক্যাটিগরি থেকে জেড ক্যাটিগরিতে উন্নীত করা হয়েছে।
নিরাপত্তা যে কমানো হয়েছে, বুধবার কলকাতা পুরসভায় বসে মেয়র নিজেও তা স্বীকার করেছেন। ‘‘একে আমি অসম্মান হিসেবে দেখছি না’’, এমনও বলেছেন মেয়র। তবে শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, লিখিত বা মৌখিক, কোনও ভাবেই তাঁকে জানানো হয়নি যে, তাঁর নিরাপত্তা কমছে। তা হলে কী ভাবে জানলেন মেয়র যে, জেড প্লাস ক্যাটিগরি আর পাচ্ছেন না তিনি? মেয়র জানিয়েছেন, তাঁকে ঘিরে যে আর জেড প্লাস নিরাপত্তা বলয় নেই, তা তিনি দেখতে পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: রানিকাহিনি! বিপাকে চিরঞ্জিৎ
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কিছু সাম্প্রতিক কার্যকলাপে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ অসন্তুষ্ট বলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। এক সময় শোভন অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন বলেই অনেক সিনিয়র মন্ত্রীকে ডিঙিয়ে তাঁর জন্য জেড প্লাস ক্যাটিগরির ব্যবস্থা হয়েছিল বলে একাংশের মত। অতএব মুখ্যমন্ত্রী অসন্তুষ্ট হলে যে নিরাপত্তা কমতেই পারে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই বলেই রাজনৈতিক শিবির মনে করছে।
আরও পড়ুন: সব কাজেই লাল ফিতে, ক্ষুব্ধ মমতা
কলকাতার মেয়রের পারিবারিক অশান্তিও প্রায় প্রকাশ্যে রাজপথে নেমে এসেছে সম্প্রতি। স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদের মামলা শুরু হয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। তবে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়াও শান্তিপূর্ণ পথে এগোচ্ছে না বলে খবর। গতকালই পর্ণশ্রী থানায় স্ত্রীয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি নিজের পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে দক্ষিণ কলকাতায় অন্য একটি বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বলে মেয়র জানিয়েছেন। নিজের বাড়িতে তাঁর অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে, সে সব তাঁকে নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও মেয়র অভিযোগ করেছেন।
মেয়রের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, তাঁরও অনেক কিছু বলার আছে। দলের নির্দেশে তিনি এত দিন মুখ বন্ধ রেখেছিলেন, কিন্তু এ বার তিনি মুখ খুলবেন বলে মঙ্গলবারই রত্না জানিয়েছিলেন। তার পর দিনই খবর এল, ডায়রেক্টরেট অব সিকিওরিটি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা বলয় ছেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।