প্রতীকী চিত্র।
নিরাপদতম মেট্রো শহর হিসেবে কলকাতার মুকুটে নব্য-পালক গুঁজে দিলেও গোটা রাজ্যের নিরিখে ভ্রুকুটি টেনেই রাখছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)। তা নিয়েই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এবং প্রধান বিরোধী বিজেপির চেনা আকচাআকচি বুধবার নতুন মাত্রা পেয়েছে।
কলকাতা নিরাপদ শহর। তবে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, গত এক বছরে রাজ্যে মেয়েদের উপর হিংসাত্মক ঘটনা বেড়েছে। পরিসংখ্যান দেখে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যে রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যা প্রচার চলে আসছে এটা তারই নমুনা। মনে রাখবেন, এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কঠিন মনোভাব নিয়েছে।’’
এ প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ তথা দলের মহিলা মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য বহু অপরাধের ঘটনা পুলিশের খাতা অবধি পৌঁছতেই পারে না। কারণ মানুষ ভয় পান। জমি মাফিয়ারা এসে হুমকি দিয়েছে, মানুষ কার কাছে যাবেন? শাসক দলের দুষ্কৃতী ঘিরে রেখেছে। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশকেও মানুষ ওদেরই চর ভাবেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কলকাতা এক কালে নিরাপদ শহরই ছিল। কিন্তু আগে পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা তো ঘটেইছে। দিন কয়েক আগে গোর্কি সদনের কাছে গুলি চলেছে। তার পরে কি কলকাতাকে নিরাপদতম শহর বলা যায়?’’
তৃণমূলের মহাসচিব অবশ্য দাবি করেছেন, এ রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষা বরাবরই অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে। সে কারণে নিরাপত্তার পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে রাজ্য সরকার যে বিপুল কর্মসূচি নিয়েছে দিল্লি তা স্বীকৃতি দিতে বাধ্য।
এনসিআরবি’র রিপোর্ট অবশ্য বলছে, গত এক বছরে দেশ জুড়ে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার প্রায় ৮.৩ শতাংশ কমে গেলেও দেশের পূর্বাঞ্চলীয় দুই রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশায় গত এক বছরে তা বেড়ে গিয়েছে বেশ কিছুটা। এনসিআরবি’র রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালে এ রাজ্যে মহিলাদের উপরে হিংসাত্মক ঘটনার পুলিশে লিপিবদ্ধ সংখ্যা ছিল ২৮৬৫৯ যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬৪৩৯। ওড়িশায় ২০১৯ এবং ২০২০ মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের পরিসংখ্যান যথাক্রমে ২৩১৮৩ এবং ২৫৪৮৯। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে—দেশে ২০১৯ সালে মহিলাদের উপরে আক্রমণের সংখ্যা যেখানে ছিল ৪,০৫, ৩২৬, গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে তা নেমে এসেছে ৩,৭১, ৫০৩-এ।
তবে, ছবিটা একেবারেই উল্টো কলকাতার ক্ষেত্রে। দেশের ১৯টি প্রধান শহরে অপরাধের খতিয়ান ময়নাতদন্ত করে এনসিআরবি’র রিপোর্ট বলছে— কোভিড-কালে, দেশের অন্য শহরের তুলনায় কলকাতার অপরাধ শুধু কম নয়, অন্যান্য বছরের তুলনায় তা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। কমে গিয়েছে মহিলাদের উপরে আক্রমণ।
এনসিআরবি’র রিপোর্ট ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া’ বলছে— প্রতি লক্ষ জনে শহর কলকাতায় অপরাধের হার ১২৯.৫। যার শীর্ষে যথারীতি রয়েছে দিল্লি। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রানাধীন পুলিশ পরিকাঠামোর ঘেরাটোপে থাকা দিল্লিতে ওই অপরাধের হার ১৬০৮.৬। আমদাবাদে ১৩০০.৫, লখনউ ৬৬৬.৬, চেন্নাই ১৯৩৭.১, হায়দরাবাদ ২৩৩.০, মুম্বই ৩১৮.৬, বেঙ্গালুরু ৪০১.৯।