Covid

Covid19 in Kolkata: মাত্র এক সপ্তাহেই দেশের মধ্যে কলকাতা সংক্রমণে প্রায় শীর্ষে, উদ্বেগ এখন আতঙ্ক

রাজ্য সরকারের কোভিড মোকাবিলা কমিটির সদস্য সৌমিত্র ঘোষের কথায়, ‘‘সাবধান না-হলে পরিস্থিতি কোথায় যাবে, সেটা কল্পনাও করতে পারছি না!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:২৮
Share:

সাত দিনে কলকাতা শহরে কোভিড সংক্রমণের হার প্রায় ২৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে ছবি রয়টার্স

মাত্র সাত দিনে কলকাতা শহরে কোভিড সংক্রমণের হার প্রায় ২৪ শতাংশে (২৩.৪২) পৌঁছে গিয়েছে। শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রোগীদের মধ্যে ১০ শতাংশের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করানো হয়েছে।

Advertisement

কলকাতার লাগোয়া হাওড়া শহরে সংক্রমণের হার প্রায় ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ৩৮ শতাংশের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। বাকি ৬২ শতাংশের কোভিড ধরা পড়েছে আরটিপিসিআর পরীক্ষায়।

কেন্দ্রীয় তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে সংক্রমণের নিরিখে কলকাতা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। হিমাচল প্রদেশের লাহুল-স্পিতি সংক্রমণের হারের নিরিখে কলকাতা থেকে ১ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে। উত্তরের ওই শহরে সংক্রমণের হার আপাতত ২৫ শতাংশ। তবে চিকিৎসকদের অনেকে মনে করছেন, কলকাতায় আরও বেশি পরীক্ষা করালে সংক্রমণের হারে লাহুল-স্পিতিকে ছাড়িয়ে যাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা!

Advertisement

রাজ্য সরকারের কোভিড মোকাবিলা কমিটির সদস্য তথা চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষের কথায়, ‘‘ফ্রান্সে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা এক দিনে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষে পৌঁছেছে। আমাদের যা জনসংখ্যা, তাতে সাবধান না-হলে পরিস্থিতি কোথায় যাবে, সেটা এখনও কল্পনাও করতে পারছি না! প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে!’’

সৌমিত্র আরও জানাচ্ছেন, ডেল্টার ‘আর ভ্যালু’ (রিপ্রোডাক্টিভ রেট। অর্থাৎ, একজনের থেকে ভাইরাস কতজনের দেহে ছড়াতে পারে, তা পরিমাণ) ছিল ১.৩। সেখানে ওমিক্রনের ‘আর ভ্যালু’ ২.৮ থেকে ৩ পর্যন্ত হতে পারে। ফলে ওমিক্রন যে ডেল্টার তুলনায় কতটা ছোঁয়াচে, তা এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট।

কিন্তু সে ক্ষেত্রে মুম্বই বা দিল্লির মতো বর্ষবিদায় বা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান কি একেবারে নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল না রাজ্য প্রশাসনের? সরাসরি ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’-এ এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সৌমিত্র বলেন, ‘‘মানুষকে সচেতন হতে হবে। মানুষ সচেতন না হলে প্রশান এটা ঠেকাতে পারবে না। শহরাঞ্চলে বা যেখানে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে, সেখানে মানুষকেই সবচেয়ে আগে সচেতন হতে হবে।’’ সৌমিত্রের আরও বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনের তরফে এবং চিকিৎসকদের তরফে মানুষকে বারবার সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ মানতে চাইছে না। আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে! মনে রাখতে হবে, বছরের প্রথম কিছুদিন আমরা সচেতন থাকলে বছরের বাকি দিনগুলো ভাল থাকতে পারব।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গত বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কলকাতার কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে। বলা হয়েছিল, কলকাতার সংক্রমণের হার ১২.৫ শতাংশ। শনিবার তা পৌঁছে গিয়েছে ২০ শতাংশে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীও বলেছিলেন, ‘‘দ্রুতগতিতে বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। তাই আমাদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি কোভি়ড বিধিও মানতে হবে।’’ শহরের বিভিন্ন প্রান্তের বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রেও সেই ইঙ্গিত মিলছিল। জানা যাচ্ছিল, বেসরকারি হাসপাতালে গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে অনেক বেশি মানুষ কোভিড উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসছেন।

পিয়ারলেস হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ভাস্করনারায়ণ চৌধুরির কথায়, ‘‘কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের থেকেও দ্রুত গতিতে বাড়ছে এ বারের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত বার সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগেছিল। এ বার প্রতি ৪৮ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে!’’ সাধারণ মানুষের মধ্যে ওমিক্রন ছড়িয়েছে কি না, তা দেখার জন্য জিন পরীক্ষার পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভাস্করনারায়ণ।

এক বেসরকারি হাসপাতালের দক্ষিণ কলকাতা এবং সল্টলেক শাখায় গত সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ১০০ জনের কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছিল। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই সংখ্যা বেড়ে গড়ে দৈনিক ২০০ জন হয়েছে। গত সপ্তাহে ওই হাসপাতালে সংক্রমণের হার ছিল ২.৩ শতাংশ মতো। চলতি সপ্তাহে তা ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত এই হাসপাতালে ২৫০ জনের কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে ৪০ জন করোনা আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। আর্থাৎ ১৬ শতাংশ নমুনাই পজিটিভ। বুধবার এই হাসপাতালে পরীক্ষা হওয়া কোভিডের নমুনার ২৬ শতাংশ পজিটিভ হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর বুধবার ২১২ জনের কোভি়ড পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৫৬ জন কোভিড আক্রান্ত।

শহরের উপকন্ঠে এক বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৫ ডিসেম্বর পরীক্ষা-হওয়া নমুনার ২ শতাংশ পজিটিভ হয়েছিল। ২৬ ডিসেম্বর ওই পরিমাণ ছিল ৪ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সকালে ৪৪টি নমুনার মধ্যে ২২টি নমুনায় কোভিড সংক্রমণ মিলেছে। বৃহস্পতিবার সারাদিনে ওই হাসপাতালে মোট নমুনার ৩৩ শতাংশ পজিটিভ হয়েছিল। ওই হাসপাতালে সোমবার ৯ শতাংশ, মঙ্গলবার ১৭ শতাংশ এবং বুধবার ১৮ শতাংশ নমুনা পজিটিভ হয়েছিল। শুক্রবার ওই হাসপাতালে ১৫০ জনের কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে ৪২ শতাংশই পজিটিভ। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সংক্রমণ কত দ্রুত ছড়াচ্ছে!

পিয়ারলেস হাসপাতালের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সুদীপ্ত মৈত্রের কথায়, ‘‘যে ভাবে এই সপ্তাহে পজিটিভিটি রেট বাড়ছে, তাতে কোথায় গিয়ে থামবে জানি না! যাঁরা আক্রান্ত, তাঁরা ডেল্টায় আক্রান্ত না ওমিক্রনে, তা-ও এখনও জানা যায়নি। তবে করোনা তো করোনাই। ভবিষ্যতে কী হবে, তা এখনও বলতে পারছি না। তাই শুধু সর্দি-কাশি ভেবে ওমিক্রনকে হেলাফেলা করা উচিত নয়।’’

আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের গত সপ্তাহের প্রথম দিকে সংক্রমণের হার ছিল ৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সেখানে সেই হার ছিল ৪৬ শতাংশেরও বেশি! বৃহস্পতিবার ৫৬টি নমুনার মধ্যে ২৬টি নমুনায় কোভিড মিলেছিল। বুধবার সেখানে সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ। ওই দিন ৫৯টির মধ্যে ২৫টি নমুনায় কোভিড মিলেছিল।

তবে চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা হওয়া নমুনা থেকে প্রাপ্ত সংক্রমণের হারকে কলকাতার সার্বিক চিত্র হিসাবে ধরা অনুচিত। কারণ, সরকারি হোক বা বেসরকারি— তেমন অসুস্থ হলে বা কোভিড উপসর্গ থাকলে মানুষ হাসপাতালে আসেন। তাই সেখানে পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

কলকাতার এক পরিচিত ডায়গনিস্টিক সেন্টারের অধিকর্তা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, হাসপাতালে বেশিরভাগই রোগীই অসুস্থ অবস্থায় আসেন। তবে বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে তুলনামূলক কম অসুস্থেরাও পরীক্ষা করান। অনেক সময় উপসর্গ না থাকলেও অনেকে বিদেশযাত্রা বা কোভিড পরীক্ষার রিপোর্টের প্রয়োজনীয়তা থেকেও পরীক্ষা করান। সোমনাথ বলেন, ‘‘অনেকেই ভ্রমণ বা বিদেশযাত্রার জন্য পরীক্ষা করাতে আসেন। তাই তাঁদের পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কম থাকে।’’ কিন্তু তাতেও ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের সংক্রমণের হার গত সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে! সোমনাথের কথায়,‘‘গত সপ্তাহে আমাদের বিভিন্ন কেন্দ্রে গড়ে ৪ শতাংশ নমুনা পজিটিভ হত। চলতি সপ্তাহে সেটা ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement