ফাইল চিত্র।
পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি কাণ্ড নিয়ে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় থেকে যাত্রা শুরু করে, শেষ দু’বছর দেশের সবচেয়ে ‘সেফ সিটি’-র তকমা। গত ১০ বছরে নারী সুরক্ষায় রাজ্য সরকারের ট্র্যাক রেকর্ড অনেকটাই এ রকম।
প্রবল আশা জাগিয়ে দশ বছর আগে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার। অথচ, ২০১২-তেই ‘ধাক্কা’ খেলেন রাজ্যবাসী। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডকে মুখ্যমন্ত্রী শুরুতেই যে ভাবে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন, তা অনেকেই ভাল ভাবে নেননি। রাজ্যবাসী দেখলেন, মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকে নস্যাৎ করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় কলকাতা পুলিশের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধানের পদ থেকে পরে সরে যেতে হল দময়ন্তী সেনকে। পরের বছরই কামদুনি-কাণ্ড। যা তৃণমূল জমানার বড় ক্ষত। ঘটনার ১০ দিন পরে ওই গ্রামে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। খুনের বিচার চাইতে মমতার কনভয়ের সঙ্গে প্রায় দু’কিলোমিটার ছুটেছিলেন নিহত ছাত্রীর দুই বন্ধু মৌসুমি কয়াল ও টুম্পা কয়াল। বিনিময়ে জুটেছিল ‘মাওবাদী’ তকমা।
পরে কামদুনি-কাণ্ডে দোষীদের সাজা হয়েছে। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডেও অভিযুক্তদের একাংশ শাস্তি পেয়েছে। এর পরে বেশ কয়েকটি ধর্ষণকাণ্ডে নাম জড়ায় শাসক দলের নেতাকর্মীদের। ধূপগুড়ির এক ব্যক্তিকে সালিশিসভায় ডেকে ধমকানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করেছিল তাঁর মেয়ে। পরদিন মেয়েটির দেহ মেলে রেললাইনের ধারে। অভিযোগ, তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। ঘর ছাড়তে হয় ওই পরিবারকে।
তবে বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে কিছু ক্ষেত্রে তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ উঠলেও অনেকেই মানছেন, নানা ঘটনায় দ্রুত গ্রেফতার এবং চার্জশিটও হয়েছে। যেমনটা হয়েছে ২০১৮ সালে ধূপগুড়িতেই। তিন দিনে ধর্ষণে অভিযুক্তদের গ্রেফতার এবং দ্রুত চার্জশিট দিয়ে ‘নজির’ গড়ার জন্য কেন্দ্রের পুরস্কারে স্বীকৃতি পেয়েছে ধূপগুড়ি থানার পুলিশই। মধ্যমগ্রামের ট্যাক্সিচালকের নাবালিকা মেয়েকে গণধর্ষণের অপরাধে দোষী পাঁচ যুবকের ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। হাওড়ার আমতার মুক্তিরচক গ্রামের এক মহিলা ও তাঁর জেঠশাশুড়িকে গণধর্ষণের অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতা বরুণ মাখাল ও রঞ্জিৎ মণ্ডল-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
‘ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরো’ দু’বছর (২০১৮ ও ২০১৯) কলকাতাকে দেশের ‘সেফ সিটি’-র তকমা দিয়েছে। অন্য শহরের তুলনায় এই শহরের নারী নিরাপত্তা যে অনেকটাই ভাল, তা বারবারই উঠে এসেছে ‘ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরো’-র পরিসংখ্যানেও। খোদ কেন্দ্রীয় সরকারে অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কলকাতার তুলনা করে ওই পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে এই শহরের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। আর দিল্লিতে ১২৩১টি। তার আগের বছর এই সংখ্যা যথাক্রমে ১৫ ও ১১৬৮। শুধু দিল্লিই নয়, মুম্বই, বেঙ্গালুরু শহরকেও নারীদের উপর অপরাধের সংখ্যায় অনেক অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে কলকাতা। দেশের সেরার এই তকমা ভরসা বাড়িয়েছে রাজ্যের মহিলাদের। রাত-বিরেতে কলকাতা-সহ রাজ্যের সব শহরে মহিলাদের চলাফেরা বেড়ে যাওয়াই তার উদাহরণ। পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, রাজ্যে থানার সংখ্যা বাড়ানো এবং নতুন নতুন মহিলা থানা করার ফল মিলেছে হাতেনাতে।
এটাই হওয়া উচিত বলে মনে করছেন মহিলাদের নিয়ে কাজ করা উত্তরবঙ্গের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার দীপশ্রী রায়। তিনি বলেন, “যখন যে সরকারই থাকুক, তাদের কাছে অনুরোধ, মেয়েদের নিরাপত্তা যেন অগ্রাধিকার পায়।”