গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
নিম্ন আদালতে সিবিআই ৯০ দিনের মধ্যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা না দেওয়ায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল জামিন পেয়ে গিয়েছেন। নিম্ন আদালতে শুনানিও শেষ। আবার, এত দিন ধরে সুপ্রিম কোর্টে যে আইনজীবী নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে মামলা লড়ছিলেন তিনিও সরে দাঁড়িয়েছেন। সব মিলিয়ে আর জি করের চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআইয়ের তদন্তে ও বিচার প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন নির্যাতিতার
মা-বাবা। পর্যাপ্ত ভাবে তদন্ত করার জন্য বৃহস্পতিবার তাঁরা আদালতে একটি নতুন মামলা দায়ের করেন। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সেই মামলাটি শুনতে সম্মতি দেন। সূত্রের খবর, মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের আইনজীবীকেও উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
এ দিন দুপুরে মামলার শুনানি হয়। তাতে আর জি করে খুন, ধর্ষণের মামলার তদন্ত কী ভাবে এগোচ্ছে, সিবিআইয়ের কাছে তার রিপোর্ট তলব করে হাই কোর্ট। বিচারপতির নির্দেশ, তদন্ত সংক্রান্ত নথিপত্র, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ ও জিজ্ঞাসাবাদের বিস্তারিত তথ্য সিবিআইকে ২৪ ডিসেম্বর আদালতে পেশ করতে হবে।
নির্যাতিতার পরিবারকে আইনি দিক থেকে সহযোগিতা করছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর পরে চিকিৎসকদের ওই যৌথ মঞ্চের তরফে নতুন আইনজীবী ঠিক করতে সব রকমের সহযোগিতা করা হয়েছে। শিয়ালদহ আদালতের পাশাপাশি হাই কোর্টেও নতুন করে মামলা দায়েরের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এ দিন সেই আইনজীবীদের সঙ্গে হাই কোর্টে আসেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁদের হয়ে আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্র, গার্গী গোস্বামী, রাহুল কর্মকারেরা সওয়াল করেন। তাঁরা আর্জি জানান, তদন্তের ও বিচার প্রক্রিয়ার গতিপ্রকৃতির তত্ত্বাবধান করুক কলকাতা হাই কোর্ট। সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ না দেওয়ার আর্জি করেন। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত ৫১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট তদন্তের নজরদারি করছে। তবে পরিবার চাইলে বৃহত্তর তদন্তের স্বার্থে ওই বিষয়টিতে হাই কোর্টও নজরদারি করতে পারে। ভবিষ্যতে ১৫ দিন অন্তর তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট নেওয়ার প্রসঙ্গে ২৪ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নিতে পারে হাই কোর্ট। মৃতার পরিবারের তরফের আইনজীবীদের অভিযোগ, ঘটনায় জড়িত অনেকেরই সাক্ষ্য নেয়নি সিবিআই। আর জি করের ডেপুটি সুপারের সাক্ষ্যও নেওয়া হয়নি। তাই সিবিআই তদন্তে আস্থা রাখতে পারছেন না নিহতের মা-বাবা। চিকিৎসক মহলেরও অনেকেরই অভিযোগ, খুন-ধর্ষণের মামলার তদন্তে সঞ্জয় রায় ছাড়াও আর কারা জড়িত সেটা বের করছে না সিবিআই। তদন্তে সরকারি আধিকারিক, পুলিশ আধিকারিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন থাকলেও তা করা হয়নি। এমনকি এক মাস ধরে শিয়ালদহ আদালতে শুনানি চললেও মৃতার মায়ের সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।
তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশে আস্থা নেই, সিবিআইয়ে আস্থা নেই! হচ্ছেটা কী? বিচারে সাক্ষ্যদান প্রায় শেষ। তদন্তে অসঙ্গতি থাকলে তাঁরা তো তা সুপ্রিম কোর্টে জানাচ্ছেন!’’
এ দিকে, অবৈধ জমায়েত, ফুটপাত দখল-সহ নানা অভিযোগে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবং সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। এ দিন তাঁদের ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দিল আদালত।